বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

নুরুল ইসলামের বয়স ১২১?

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

নুরুল ইসলামের বয়স ১২১?

টাঙ্গাইলের সখীপুরের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ মো. নুরুল ইসলাম ওরফে ফুরু ১২২ বছরে পা রাখলেন।

তিনি উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের সাঁড়াশিয়া গ্রামে বাস করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯০২ সালের ৩ মে। পিতা মৃতওমর আলী ও মা মৃত সবুরজান। বয়সের কারণে কুঁজো হয়ে গেছেন। তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ধারণা করা হচ্ছে, টাঙ্গাইল জেলায় তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। বাড়ি গিয়ে দেখা যায় চেয়ারে বসে আছেন নুরুল ইসলাম। এলাকার সবাই তাঁকে ফুরু বলেই চেনেন। হাঁটাচলা আগের মতো করতে পারেন না, তাই বাড়িতে বসেই দিন কাটে। ছোটবেলা থেকেই তিনি গরুর গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। প্রথম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবই তাঁর মনে আছে।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সমবয়সী যারা ছিলেন, তারা কেউ বেঁচে নেই। অনেকের ছেলেও মারা গেছেন। আমি এখনো অনেক ভালো আছি। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন ইমান নিয়ে মারা যেতে পারি। পাকিস্তান আমলে আমি বিয়ে করেছি। স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে এই তো কিছুদিন আগে। আমি অশিক্ষিত এবং অসচেতন মানুষ। তাই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারিনি। কাজ করেছি আর ভাত খাইছি।’

সখীপুরের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার কথা শুনলে গল্প মনে হবে। এই সখীপুরে তখন ভয়ংকর জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে বাঘ ও হরিণ থাকত। বন্যপশুর সঙ্গে যুদ্ধ করতাম। বাড়ি থেকে একা বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে থাকতাম। এত রাস্তাঘাট ছিল না। হেঁটে কালিহাতীর আওলাতৈল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল ও ৮০ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ গেছি।’ পরিবারসূত্রে জানা যায়, তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। তাদের ঘরে মজিবর ও শাজাহান নামে দুই ছেলে এবং হাজেরা খাতুন নামে এক মেয়ের জন্ম হয়। প্রায় তিন বছর আগে ছেলে মজিবর মারা গেছেন। তাঁর ছোট ছেলে ৬৫ বছর বয়সী শাজাহান মিয়া বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমার বাবা এখনো অনেক শক্ত আছেন, নিজের কাজ নিজে করতে পারেন। বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

কালিয়া ইউনিয়নের সদ্যসাবেক চেয়ারম্যান এস এম কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার জানা মতে তাঁর বয়সের মানুষ সখীপুর নয়, সারা টাঙ্গাইলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাই তাঁকে ফুরু নামেই চেনেন। উনি অনেক ভালো মানুষ।’

তাঁর নাতি কণ্ঠশিল্পী জেসন রহুল বলেন, ‘আমার ধারণা বর্তমান সময়ে দেশে ১২২ বছর বয়সী কোনো মানুষ বেঁচে নেই। আমার দাদার চার প্রজন্ম এখনো বেঁচে আছেন। এটা মনে করে খুব আনন্দ পাই। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার দাদা এখনো ভালোভাবে বেঁচে আছেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর