বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেড়েছে নারী ছিনতাইকারী

অভিজাত বিপণিবিতান থেকে অলিগলিতে অবস্থান ♦ দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেড়েছে নারী ছিনতাইকারী

ঢাকায় ব্যাপকভাবে বেড়েছে মহিলা ছিনতাইকারীর সংখ্যা। এরা বোরকা পরে, কখনো অত্যাধুনিক পোশাক পরে, কখনো ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে স্নেহময়ী মায়ের অভিনয় করে সহসাই ঢুকে যায় জনারণ্যে। চোখের পলকে হাতিয়ে নেয় মোবাইল, নগদ টাকা ও ব্যাগে থাকা স্বর্ণালংকার। বোরকা পরা অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, হাসপাতাল, বাস স্টপেজে ঘুরে বেড়ান তারা। এসব জায়গায় বোরকায় শরীর ঢেকে চললেও আড়ালে এসব নারী আসলে পকেটমার হিসেবে কাজ করছেন। এরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকছেন ছিনতাই তৎপরতায়। চক্রটি ছিনতাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকার মহাজনের কাছে। সম্প্রতি এ চক্রের ছদ্মবেশী নয় নারী পকেটমার ও তাদের সাত মহাজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন মডেলের ৪০টি মোবাইল ফোন। দুটি মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রের সন্ধান পায় ডিবি। গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান।

জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল একজন অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জজের স্ত্রী নিউমার্কেট থেকে রিকশায় ইডেন মহিলা কলেজে যাওয়ার পথে ব্যাগ থেকে আইফোনটি হারিয়ে ফেলেন। ফোনটি উদ্ধার করে ডিবি। ২ মে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের স্ত্রী তার সন্তানকে স্কুল থেকে আনার জন্য আজিমপুরের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। স্কুলের গেটে হঠাৎ দেখেন তার ব্যাগের চেন খোলা; মোবাইলটি নেই। ১৪ মে ডিবি পুলিশ উদ্ধার করে দেয় আইফোনটি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. মাহাবুব হোসেন, মো. মোক্তার হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মো. ইমরান হোসেন, বর্ষা আক্তার ওরফে মীম, সুমি আক্তার প্রিয়া, শাবনূর, আলেয়া ওরফে আলো, সাথী আক্তার, ছৈয়াদ হালদার, মো. আশরাফ ঢালী, মো. জাকির হোসেন, মোছা. ছকিনা বেগম, সুজনা আক্তার ওরফে সুজিনা আক্তার ওরফে রুশকিনা, মোসা. তানিয়া খানম ও তাসলিমা খাতুন। এরা সবাই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। মঙ্গলবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশ এলাকা এবং গুলিস্তানে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে নয় নারী পকেটমারসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, রমনা ও লালবাগের বিভিন্ন মার্কেট, হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা নারীদের ব্যাগ বা পকেট কেটে মোবাইল ও টাকা বিশেষ কৌশলে চুরি করার জন্য গড়ে উঠেছে নারী পকেটমারের বড় চক্র। এরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে বিভিন্ন জনারণ্য দাপিয়ে বেড়ায়। চোখের পলকে মোবাইল, টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃতরা নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজ, মার্কেট ও হাসপাতালে বিশেষ কৌশলে নারীদের ভ্যানিটিব্যাগ এবং পুরুষদের শার্ট-প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা চুরি করতেন। ডিবি কর্মকর্তা বলেন, বর্ষা আগে কাজ করেছেন ডিজে শিল্পী হিসেবে। পরে বান্ধবীদের হাত ধরে নতুন মডেলের মোবাইল পাওয়ার আশায় যুক্ত হন মোবাইল পকেটমারির কাজে। গত পাঁচ বছরে এ কাজ করে ধরা খেয়েছেন তিনবার, ছাড়া পেয়ে একই কাজে ফিরেছেন। ১০ বছর বয়স থেকে মাকে পকেটমারির কাজ করতে দেখে এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সংকল্প করেন আলো। আট-নয় বছর ধরে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় করে আসছেন পকেটমারির কাজ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রিয়া। বর্ষা, আলো, প্রিয়া এ তিন নারী পকেটমার গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ, বকশীবাজারসহ বদরুন নেসা মহিলা কলেজ, আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কোনো দিন একেকজন সাতটি পর্যন্ত মোবাইল চুরি করেছেন। আইফোন বাদে অন্য ফোনের জন্য তাদের দেওয়া হয় ২-৪ হাজার টাকা। আর আইফোনের জন্য দেওয়া হয় ৭-৮ হাজার টাকা। চুরি করা মোবাইলগুলো থেকে বাটন মোবাইলগুলো বিক্রি হয় কম দামে। আইফোনগুলোর যন্ত্রাংশ খুচরা দামে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া আইএমইআই পরিবর্তন করেও বিক্রি করা হয়। তাদের ব্যাপারে কারও সন্দেহ জাগে না। তারা একসঙ্গে দুজন থাকে। একজন টার্গেট মহিলাকে চাপ দেন, অন্যজন কৌশলে চোখের পলকে ভ্যানিটিব্যাগের জিপার খুলে মুঠোফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। গতকাল শাহবাগ থানা ও লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত নারী আসামিদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন এবং পুরুষ আসামিদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মার্কেট, স্কুলের ফটক, হাসপাতাল বা বাস স্টপেজে থাকা অবস্থায় নিজের মালামাল নিয়ে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তা মশিউর রহমান। তিনি বলেন, মোবাইল বা অন্য জিনিস চুরি বা হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করতে হবে। উদ্ধার হওয়া ৪০টি মোবাইলের মধ্যে মাত্র একটি ফোন হারানোর জিডি পাওয়া গেছে। আইনি ব্যবস্থা নিলে কখনো না কখনো সুফল পাওয়া যায়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর