শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা

ভোগান্তির শঙ্কা ১৭৬ স্থানে

হাসান ইমন

আসন্ন ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের ১৭৬টি স্থানে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে রয়েছে ২১টি স্পট। এর পাশাপাশি গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লার কয়েকটি স্থান বেশি যানজটপ্রবণ। বাকি স্পটগুলো অন্যান্য জেলায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এসব স্থানে যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের অতি কাছে পশুর হাট ও সড়কে পশুর গাড়ি। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাজার ও নির্মাণকাজ চলায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

যানজটপ্রবণ ১৭৬ স্পট : ঈদযাত্রায় দেশে যানজটপ্রবণ সড়কের ১৭৬ স্থানের মধ্যে ঢাকায় ২১টি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মহাখালী বাস টার্মিনাল, খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড, এয়ারপোর্ট, গাবতলী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও পোস্তগোলা ব্রিজ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলার ১৯ স্থানে, কুমিল্লা জেলার ১৯ স্থানে, চট্টগ্রাম জেলার ৭, ঢাকা জেলার ২১, টাঙ্গাইল জেলার ৬, সিরাজগঞ্জ জেলার ১২, বগুড়া জেলার ৩, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলার ৯, রংপুর জেলার ৬, ময়মনসিংহ জেলার ৩, গাজীপুর জেলার ১৩, নরসিংদী জেলার ১২, কিশোরগঞ্জ জেলার ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৩, হবিগঞ্জ জেলার ২ এবং মানিকগঞ্জ জেলার পাঁচটি স্থান অতি যানজটপূর্ণ। একই সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে পদ্মা সেতু অংশ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলায় পদ্মা সেতুর অংশে যানজট হতে পারে।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গতকাল বনানীতে বিআরটিএর সম্মেলন কক্ষে একটি সভা হয়। সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানের ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে। মানুষ নিরাপদে যেতে পেরে খুশি হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল সমন্বয়। কিন্তু রমজানের ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদযাত্রায় চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। এবার সবাইকে বেশি প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

তিনি বলেন, চন্দ্রাসহ গাজীপুর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে বেশি নজর দিতে হবে। এ ছাড়া ঈদযাত্রার সময় বৃষ্টির মৌসুম। তাই সড়কে কোথাও খানাখন্দ দেখা দিলে রোডস অ্যান্ড হাইওয়েকে জরুরিভাবে দেখতে হবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সড়ক ঠিক করতে হবে। যাদের দায়িত্বে এটা আছে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব না নিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যানবাহন মালিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঈদের আগে-পরে সাত দিন সারা দেশের সব সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

সভায় অংশ নেওয়া সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেন, যাত্রীবাহী গাড়ির পাশাপাশি কোরবানির পশুবাহী গাড়িও চলবে মহাসড়কে। একদিকে যেমন ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী গাড়ি বের হবে, অন্যদিকে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করবে। এতে সড়কের উভয় অংশেই যানবাহনের সমান চাপ থাকবে। একই সঙ্গে এবার তুলনামূলক ভোগান্তি বেশি হবে উত্তরাঞ্চলের পথগুলোয়। উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার অন্যতম পথ এয়ারপোর্ট-টঙ্গী-গাজীপুর এবং এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া উভয় সড়কেরই অবস্থা ভালো নয়। এয়ারপোর্ট-টঙ্গী-গাজীপুর রুটে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এ ছাড়া গাবতলী থেকে যেসব গাড়ি উত্তরাঞ্চলে যাবে, সেগুলো সাভার, নবীনগর, বাইপাইল ও চন্দ্রা এলাকায় স্বাভাবিক সময়েই যানজটের কারণে থেমে থেমে চলে। ঈদে তা তীব্র হতে পারে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জ এবং এলেঙ্গা থেকে বগুড়া সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। ওই সব সড়কেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে ওই সব স্পটেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই ধরনের আশঙ্কা রয়েছে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাওয়া মেঘনা-গোমতী সেতু পাড়ি দেওয়া যাত্রীদের ক্ষেত্রেও।

যানজট এড়াতে সড়ক বিভাগের যত পরিকল্পনা : এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী ও গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ভোগান্তি কমাতে পদক্ষেপ নিতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা ও গাজীপুরের ডিসি-এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে সড়ক বিভাগ। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় চলাচলকারী লোকাল বাস যাতে দূরপাল্লার রুটে যাতায়াত না করে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা যেন রাস্তার ওপর ধান, খড় ও কাঠ শুকাতে না পারেন, তা মনিটরিং করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সড়ক ও মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন বাস, ত্রুটিপূর্ণ ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি এবং নসিমন, করিমন ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ নিশ্চিত করতে বিআরটিএ, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে কাজ করতে বলা হয়েছে। বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সড়কপথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া পোশাককর্মীদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দিতে মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছে এ মন্ত্রণালয়। বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো, রাস্তায় গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করাসহ জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও নির্দেশনা রয়েছে। টোলের টাকা আগ থেকেই খুচরা করে নিয়ে যেতে পরিবহন-সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে প্রচারণা চালাবে বিআরটিএ। পাশাপাশি বিআরটিসি দেশের বিভিন্ন রুটে বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে।

সর্বশেষ খবর