শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
কনস্টেবল বাদল হত্যা

মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষকে ১০ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-১০-এর একটি দল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে মাদকসহ বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত নয়টি মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। নিহত পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া গণজাগরণ মঞ্চের সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রিপনের অন্যতম সহযোগী ও তার খালাতো ভাই গোপাল চন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। কিছুদিন পর একটি মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন রিপন নাথ ও তার একজন সহযোগী। অভিযানকারী টিমে ছিলেন কনস্টেবল বাদল। দুই মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হন রিপন। পরে তারা জানতে পারেন মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়া কনস্টেবল বাদল মতিঝিল এলাকায় বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের পেছনে পুলিশ সদস্য বাদলের হাত রয়েছে বলে আসামিরা সন্দেহ করেন। নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য রিপন তার সহযোগীদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রেন্ট-এ-কারের প্রাইভেটকার চালানোর সুবাদে রিপনের বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কনস্টেবল বাদলকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রেন্ট-এ-কার থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া নেন। নিজে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যদের নিয়ে কনস্টেবল বাদলের কর্মস্থল শাহবাগে যান তারা। বিশ্বজিৎ ও কনস্টেবল বাদল একই এলাকায় বসবাস করায় পূর্বপরিচিত। ফলে বাদলকে কৌশলে ডেকে আনার জন্য বিশ্বজিৎকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ কনস্টেবল বাদলকে ডেকে এনে কৌশলে প্রাইভেটকারে ওঠান। তারা বাদলকে নিয়ে প্রাইভেটকারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকেন। এ সময় তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে মতিঝিল কালভার্ট-সংলগ্ন নির্জন এলাকায় রিপন নাথ ও তার সহযোগীরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে বাদলকে হত্যা করেন। পরে গুম করার উদ্দেশ্যে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে প্রাইভেটকার থেকে কনস্টেবল বাদলের লাশ ফেলে দিয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, কনস্টেবল বাদল এভাবেই দায়িত্ব পালনকালে একটি মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়ার কারণে মাদক চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে জীবন দেন। বাদলের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন অনেক সদস্য সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক সদস্য গুরুতর জখম অথবা অঙ্গ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার রিপন মতিঝিল এলাকার মাদকের চোরাকারবার এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। কনস্টেবল বাদল হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও এ মামলার বিচারকাজ চলমান থাকা অবস্থায় জামিনে বের হয়ে টাঙ্গাইলে আত্মগোপনে চলে যান রিপন। আত্মগোপনে থেকে মাদক কারবারের জন্য বিভিন্ন নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সিম ব্যবহার করেন তিনি। ২০১৩ সালের আগেও কয়েকবার মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তিনি এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ভোগ করেন। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবককে শরীরে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর জানা যায়, মৃত বাদল মিয়া পুলিশ বাহিনীর সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল রিপনকে প্রধান করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউল আলম চার্জশিট দাখিল করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রিপন নাথ ঘোষসহ মোট পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ খবর