রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেট

প্রতিদিন ডেস্ক

বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

তিস্তা নদীতে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যার আশঙ্কা। এরই মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল লালমনিরহাটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও কুড়িগ্রামের নদ-নদীতেও পানি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

লালমনিরহাট : গতকাল বিকাল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টা ও সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার ও ৫২ দশমিক ২ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, আগের রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পানি প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করে। এভাবে কমতে থাকলে বিকালের দিকে পানি কমে যেতে পারে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বেড়েছে। তবে ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে থাকবে। পানি বাড়লে তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বদা প্রস্তুত আছে। এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় ফসলের খেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়েও তারা বিপাকে পড়েছেন। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, হঠাৎ রাতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। পানির বেড়ে যাওয়ায় আমরা রাত জেগেছিলাম। তবে বর্তমানে পানি কিছুটা কমেছে। একই এলাকার একরামুল হক বলেন, এতদিন তো নদীতে পানি ছিল না। হঠাৎ পানি বাড়ছে। হাতিবান্ধার গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, আমার এলাকার কিছু জায়গায় পানি প্রবেশের খবর পেয়েছি। ওসব এলাকাগুলোয় সবসময় খোঁজখবর রাখছি।

রংপুর : উজানে বর্ষণ ও নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদী পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এক দিনের ব্যবধানে পানি বেড়েছে প্রায় এক সেন্টিমিটার। ফলে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাঁচ দিনে তিস্তা নদীর পানিসমতল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ২৪ ঘণ্টায় ৬০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টের পানি ৫২ দশমিক ২ মিটারে প্রবাহিত হয়েছে। যা বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে। উজানে দোমুহুনি পয়েন্টে পানিসমতল স্থিতিশীল হওয়ার কারণে তিস্তা নদীর পানিসমতল আগামী ১২ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে। তবে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় এ পানিসমতল পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ১২ ঘণ্টায় বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া উপজেলার মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার পানি বেড়েছে।  আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, শনিবার সকালে ৫২ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার ছিল। এ সময় নদীর পানি বাড়বে আবার কমবে এটাই স্বাভাবিক।

কুড়িগ্রাম : কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির বদৌলতে অসহনীয় গরম থেকে আপাতত মুক্তি মিললেও কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকায় বন্যার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও আপাতত বন্যার পূর্বাভাস নেই।

পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানিসমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম শহরের সেতু পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৪ ও চিলমারী পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বেড়েছে ৮৭ সেন্টিমিটার। বাড়ছে তিস্তার পানিও। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ নদীগুলো পানিসমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তার পানি লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কুড়িগ্রামে আপাতত বিপৎসীমা অতিক্রমের পূর্বাভাস নেই। ফলে জেলায় আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বাভাসও নেই।

বিপৎসীমা ছাড়ালো সুরমার পানি, সিলেট অঞ্চলে বন্যার শঙ্কা

সিলেট : কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে গতকাল সকালে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি ছিল বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জানান, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৩টার দিকে পানি ছাড়িয়ে যায় বিপৎসীমা। এ সময় এ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয় ১২.৯৫ পয়েন্ট। বিপৎসীমা ছিল ১২.২৬ পয়েন্ট। সিলেটের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৫.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৯ মিলিমিটার। আগামী ৩৬ ঘণ্টায় সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় পাহাড়ি ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান আগামী ১৫ দিন সিলেটে অতিবৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিলেটে হতে পারে বন্যা। এ পরিস্থিতিতে নগদ টাকাসহ ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত করা হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্র।

সর্বশেষ খবর