রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাজেট বাস্তবায়ন ৯ মাসে ৪৫ শতাংশ

পরিকল্পনাতেই আটকে আছে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন

মানিক মুনতাসির

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েকদিন। তবে বাজেট বাস্তবায়নের হিসাব অনুযায়ী ধরলে বাকি রয়েছে তিন মাস। অর্থাৎ নয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র পরিকল্পনা কমিশনের হাতে রয়েছে। এই নয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। অথচ সরকারের ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনাতে রয়েছে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্য। টাকার অঙ্কে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে খরচ করা হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বিভিন্ন বছরের বাজেট ডকুমেন্ট ঘেঁটে জানা গেছে, প্রতি অর্থবছর বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও করা হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেট গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেট গড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও। বাজেট বাস্তবায়নের প্রধানতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে। এ ছাড়া সঠিক সময়ে অর্থ ছাড় না হওয়া, অর্থের সংস্থানের ক্ষেত্রে নানা জটিলতাও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

২০২১-২২ অর্থবছরের ত্রিবার্ষিক পরিকল্পনায় শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের গত নয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের আকার কিছুটা কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাজেটের মাত্র ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। সংশোধিত বাজেট বিবেচনায় নিলে এর পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট ঘোষণার সময় সর্বদাই বিশাল পরিকল্পনা করা হয়। আবার অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে তা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়। তাও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এর জন্য মূল বাধা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সমাপ্তি ঘটবে আর মাত্র কদিন পরই। অর্থাৎ ৩০ জুন নতুন বাজেট পাস হলে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে। এরই মধ্যে জুন-মার্চ ৯ মাসের বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে বাজেটের মাত্র ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা অর্ধেকেরও কম। এতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

এদিকে অর্থ বিভাগ বলছে, ২০২১-২০২২ টানা দুই বছরের মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থমকে দাঁড়ায়। যার ফলে বাজেট বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু পরের বছরই এসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে বাজেট বাস্তবায়নের ওপর।  এদিকে বাজেটের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেট গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেট গড়ে ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এই চিত্রকেও হতাশাজনক বলে মনে করেন ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। কেননা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গতি আসে না। অর্থবছরের শেষে এসে তাড়াহুড়ো করে এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন দেখানো হয়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ খবর