সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ নেতার হুমকির পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘শেখ হাসিনা নৌকা দিছে, আবার ইলেকশন কীসের? কীসের ইলেকশন? আর ইলেকশন যদি হয়, বুঝে নেবেন ইলেকশন কাহাকে বলে। প্রয়োজনে সাইকেল ভেঙেচুরে কচা নদীতে ফেলে দেওয়া হবে।’ সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের এমন বক্তব্যের পর নৌকার প্রার্থী ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন দাখিল করেনি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। গতকাল ছিল সেখানে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন।

নৌকা প্রতীক পাওয়া আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান গাজীর পক্ষে আয়োজিত প্রচারণা সভায় উল্লেখিত বক্তব্য দেন মহারাজ। সেখানে নৌকার বিরুদ্ধে দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির দল জেপির নেতা সিকদার দেলোয়ার হোসেনের। তিনি ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। কাউখালী এমপি মঞ্জুর নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন একটি উপজেলা। মহিউদ্দিন মহারাজের দেওয়া ওই বক্তব্য মুহূর্তে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর আর গতকাল মনোনয়ন দাখিল করেননি সিকদার দেলোয়ার। কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শনিবার গভীর রাতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আবদুস সহিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে সেখানে বক্তব্য দেন মহিউদ্দিন মহারাজ। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সভায় অনেক বক্তা বলেছেন তাঁরা কাউখালী থেকে সাইকেল বিতাড়িত করতে চান। শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নয়, আগামী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও সাইকেলকে বিতাড়িত করতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করে সাইকেলকে ভেঙেচুরে কঁচা নদীতে ফেলে দিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌকা দিয়েছেন, তারপর আবার ইলেকশন কীসের?’ জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভোট নিয়ে এমপি হবেন। আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ঠেকানোর জন্য সাইকেল দেবেন। এটার বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। এটা কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদের আওয়ামী লীগ আর মেনে নেবে না।’ জেপির প্রার্থী সিকদার দেলোয়ার হোসেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত করে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘শিয়ালকাঠিতে নৌকাকে জয় এনে দিতে এবং সাইকেল বিতাড়িত করতে যা কিছু করতে হয় আমি করব। সাইকেলের প্রার্থী অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। এই সাইকেলের রোষানলে পড়ে তিনি (সিকদার) যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। সিকদার যেন দয়া করে বাড়ি চলে যান।’

সিকদার দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা জেপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিঞা বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তো আওয়ামী লীগের জোটে আছেন। তাই আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে। বিষয়টি তিনি দলের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। জানতে চাইলে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘আমি কাউকে মনোনয়ন দাখিল করতে নিষেধ করিনি। রাজনৈতিক সভায় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে অনেক ধরনের কথাই বলতে হয়। আমি কেবল বলেছি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন সেখানে অন্য সবার উচিত তাকে সম্মান করা। তাছাড়া কাউখালী-ভান্ডারিয়া- নেছারাবাদের এমপি আওয়ামী লীগ জোটের। এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী দেওয়া হয় না। তিনি আওয়ামী লীগের ভোটে এমপি হন। যেখানে আওয়ামী লীগ তাকে এমপি বানায় সেখানে নৌকার সঙ্গে তিনি লড়তে যান কেন? সাহস থাকলে আলাদাভাবে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তিনি তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করুক। আমার কাছে আমার দল আমার নেত্রী সবার ওপরে।’

শিয়ালকাঠি ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল রবিবার। ২৫ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। আগামী ১৭ জুলাই ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান একা মনোনয়ন দাখিল করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে সাধারণ এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা।

সর্বশেষ খবর