বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

লড়াই আওয়ামী লীগ-বিএনপির

সাইফুল ইসলাম, যশোর

লড়াই আওয়ামী লীগ-বিএনপির

ভারত সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার পুরোটা অংশ নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। এ আসনে ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল এ আসনের মধ্যে।

এ আসনে গত ১১টি সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ছয়বার বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপি প্রার্থীরা তিনবার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রার্থী একবার করে জয়ী হয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, সব দল নির্বাচনে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ আকিজ পরিবারের সন্তান শেখ আফিল উদ্দিন চতুর্থবারের মতো দলের মনোনয়ন চাইবেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি।

তবে শার্শায় বড় এ দুই দলেই বিভক্তি রয়েছে। দুই দল থেকেই আরও বেশ কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নির্বাচনের আগে যারা এ বিভক্তি মিটিয়ে ফেলতে পারবেন, তারাই লাভবান হবেন।

শেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। আবার দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় দলের মধ্যে কিছু বিভক্তিও তৈরি হয়েছে। বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন গতবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাজমুল হাসানও মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি অনেকটাই এগিয়ে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। তবে ওয়ান-ইলেভেনের সময় কিছু ভূমিকায় দলে তাঁকে নিয়ে অনেক সমালোচনাও আছে। বহিষ্কৃতও হয়েছিলেন। পরে আবার দলে ফিরেছেন। গতবার মনোনয়নও পেয়েছিলেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। পাশাপাশি শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহিরও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। গত নির্বাচনে জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে প্রার্থী ছিলেন। তবে এবার এ দুই দল থেকে এখনো সম্ভাব্য কোনো প্রার্থীর তৎপরতা চোখে পড়েনি। বাকি দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কখনো দলের কাছে মনোনয়ন চাইনি। প্রতিবারই শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ আমার জন্য মনোনয়ন চেয়েছে এবং দল সেটা বিবেচনা করেছে। এবারও যদি শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগ আমার জন্য মনোনয়ন চায় এবং দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, নির্বাচন করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল, এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতা রয়েছেন। ফলে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে শার্শায় আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নেই। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই সে সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। নির্বাচনে এসবের কোনো প্রভাব পড়বে না।’

বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল বলেন, ‘শার্শার ঘরে ঘরে এখন পরিবর্তনের দাবি। আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে রয়েছি। গতবারও মনোনয়ন চেয়েছিলাম, এবারও চাইব।’

বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গতবার দল আমাকে মনোনীত করেছিল। এবারও মনোনয়ন চাইব।’ তিনি বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে অবশ্যই এলাকার উন্নয়নে বেশি মনোনিবেশ করব। শার্শা সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে মাদকের সহজলভ্যতা অনেক। এ বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখব।’

শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘দলের জন্মলগ্œ থেকেই আমি বিএনপির সঙ্গে আছি। জেলে গেছি অসংখ্যবার। একবার তো টানা এক বছর জেলে রেখে দিয়েছিল। এসব বিবেচনায় দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, অবশ্যই নির্বাচন করব। তবে সবকিছুই দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’ আগের কয়েকটি নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনও যদি জোটগতভাবে হয়, তাহলে এ আসনে ভোটের হিসাবনিকাশ কিছুটা জটিল হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এর আগে জোটগতভাবে ভোট করে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। যদিও জামায়াতের এবার নিজেদের দলীয় প্রতীকে ভোট করার সুযোগ নেই। তার পরও বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচন করলে বিএনপির প্রতীকে জামায়াত ভোট করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি অভ্যন্তরীণ বিভক্তি মেটাতে না পারে, তাহলে এবার তাদের জয় নিয়ে সংশয় থেকে যেতেই পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর