বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জমজমাট ইন্দুবালা ভাতের হোটেল

শিমুল মাহমুদ, পাবনা থেকে ফিরে

জমজমাট ইন্দুবালা ভাতের হোটেল

লালপাড় সাদা শাড়ি পরা মেয়েরা খাবার বেড়ে দিচ্ছে। মমতা আর আন্তরিকতা নিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করছে। ‘কুমড়ো ফুলের বড়া’, ‘বিউলির ডাল’, ‘ছ্যাঁচড়া’, ‘আমুতেল’, ‘মালপোয়া’, ‘চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল’, ‘চন্দ্রপুলি’ ‘কচুবাটা’ এ রকম বিচিত্র নামের ব্যতিক্রমী খাবারের সম্ভার নিয়ে গত মাসেই পাবনায় যাত্রা শুরু করল ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। এক মাস বয়সী এই হোটেলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে পাবনা ছাড়িয়ে সারা দেশে। পাবনা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের জালালপুরে  ব্যস্ত সড়কের পাশে এই হোটেলে বসার জায়গা পাওয়া কঠিন। কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ ২০২০ সাল থেকেই পাঠকমহলে সমাদৃত। হালে সেটি ওয়েব সিরিজ হয়ে পর্দায় ফিরে এসেছে। উপন্যাসের অধ্যায়ের নাম ধরে খাবারের নাম রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক খাবার ফিরিয়ে এনেছে এই নান্দনিক হোটেল। হোটেলের এক কর্মী বললেন, একবেলা খাবারের জন্য কতদূর থেকে লোকজন এখানে আসে বিশ্বাস করা কঠিন।

স্টিলের থালার ওপর কলাপাতা পেতে তার মধ্যেই খাবার পরিবেশন করা হয়। ঠিক একটায় খাবার শুরু হলেও দুপুরের বেশ আগে থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে হোটেলটিতে। পাবনা শহর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন ভোজনরসিকরা। রিকশা, অটো, বাইক ও গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করেন নানা পদের মুখরোচক খাবারের জন্য। যারা খাবার পরিবেশন করেন, তাঁদের পোশাকেও রয়েছে নতুনত্ব। মেয়েরা পরেন লালপাড় সাদা শাড়ি আর ছেলেরা লাল রঙে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ লেখা সাদা টি-শার্ট। অতিরিক্ত ভাত এবং ডাল দেওয়া হয় স্টিলের ছোট বালতিতে। প্রতিদিন খাবারের মেনুতে কিছুটা বদল আনা হয়। উপন্যাসের সঙ্গে মিল রেখে একটি বোর্ডে চক দিয়ে লেখা থাকে দুপুর ও রাতের মেনু এবং তার মূল্যতালিকা। সেই বোর্ডে একেক সময় যুক্ত হয় একেক পদ। কখনো আগে থেকেই যোগ করা মেনু হঠাৎ বদলে যায়। এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেছে বেশ কিছু পদ, প্রতিদিন সময়ের আগেই যা ফুরিয়ে যাচ্ছে। নারকেল দিয়ে কচুবাটা, আম দিয়ে নলা মাছ, কুমড়োর ছক্কা, পারশে মাছের ঝোল, আম-তেলের বেগুনভাজাসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তার সুনাম এখন ভোজনরসিকদের কাছে।

বাংলা উপন্যাসের পাতা কিংবা রুপালি পর্দার প্রেরণা থেকে বাস্তবে রূপ নেওয়া ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ এর ম্যানেজার বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, আমাদের হোটেলটি একেবারে নতুন। গত ১২ মে এটি শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই এর সুনাম পাবনা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। পাবনার বাইরে নাটোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী থেকে অনেকেই খেতে আসেন এখানে। বর্তমানে ১৪ জন স্টাফ রয়েছে হোটেলটিতে, যারা খাবার পরিবেশন করেন। বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকে। বিকাল ৫টা থেকে ¯œ্যাকস পাওয়া যায়। স্বল্প পরিসরে শুরু করা এই হোটেলে এখন জায়গা পাওয়া দুষ্কর। তবু ভিন্ন স্বাদের খাবারের স্বাদ নিতে সময় নিয়ে অপেক্ষা করে সবাই। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ তৈরির পেছনের গল্প সম্পর্কে এর উদ্যোক্তা সোহানী হোসেন বলেন, আমি হসপিটালিটি ব্যবসার সঙ্গে আগে থেকেই জড়িত। আমাদের বড় পরিসরের দুটি রিসোর্ট রয়েছে। হারিয়ে যেতে বসা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কিছু বাংলা খাবারের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় ঘটানো ও কম খরচে খাবারের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এই হোটেল। তিনি বলেন, খরচ কম হলেও খাবারের মানের ব্যাপারে আমি কখনোই আপস করি না। এখানকার খাবারের অধিকাংশ শুরুতে আমি বাসায় রান্না করার চেষ্টা করি। প্রতিদিন নিজে এসব রান্নার তদারকি এবং খাবার পরিবেশনের সময় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছি। উপন্যাসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও জানান, ‘উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়ে ‘কুমড়ো ফুলের বড়া’তে ইন্দুবালা বলেছেন, ‘দুপুরের অতিথি হলো মেঘ না চাইতে জল। তাকে পেটপুরে না খাওয়ালে গেরস্তের অমঙ্গল হবে। মাঠভরা ধান হবে না। গোলাভরা ফসল উঠবে না।’ এই অনুভূতিটা আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি।

সর্বশেষ খবর