বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন জোট রোহিঙ্গাদের

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রত্যাবাসন নিয়ে অভিন্ন সুরে কথা বলতে মাঠে নেমেছে মতৈক্যের জোট ‘আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এআরএনএ)’। এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অন্যতম বৃহৎ জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার নুরুল ইসলাম। এ জোটের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ক্যাম্পের দুই জঙ্গি সংগঠন ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদীনসহ কমপক্ষে ২০টি সংগঠন। এর মধ্যে ১৯ জুন তারা প্রথম শোডাউনও করেছে। আগামী আগস্টে বড় ধরনের জমায়েত করতে কাজও শুরু করেছে এআরএনএ।

সাবেক কূটনীতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র মানসিকতা থেকে বের হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্দেশ্যে এ জোট হয়ে থাকলে তা অবশ্যই ভালো হবে। তবে অতীতের মতো যাতে এটি তাদের বিপথগামী করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে কথা হয় জোট গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট এক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে। বলেন, সশস্ত্র আন্দোলন পরিহার করে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে হাঁটছে রোহিঙ্গারা। তাই সব রোহিঙ্গা সংগঠনকে সমন্বয় করে এআরএনএ গঠন করা হয়েছে। এ জোট রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রবাসনের জন্য কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কাজ করবে।

জানা যায়, ২০১৭ সালের পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব হয়। চীনের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তৈরি হয় প্রত্যাবাসনের রূপরেখাও। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমাবেশ করা হয়। এ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধীদের হামলায় মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর থমকে যায় সেই কার্যক্রম। এরপর শরণার্থী ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বিবদমান গ্রুপগুলো। একের পর এক চলতে থাকে টাগের্ট কিলিং। ফের প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্দোলন করতে ‘আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এআরএনএ)’ নামে নতুন একটি জোটের জন্ম হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ জোটের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার নুরুল ইসলাম। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আরএসওর আরেক প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনুস ও ড. রেজা উদ্দিন। এ জোটের নেতৃত্বে দেওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন উ নে সান লউন, মাস্টার আমান উল্লাহ, উ তুন খিন, উ নে সান লুইন, ডা হ্লা মিন্ট, উ ডাও মিন হুত, ডা. হাবিব উল্লাহ ও ডা. আবু সিদ্দিক আরমান। এরই মধ্যে এ জোটের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন জঙ্গি সংগঠন ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদীনসহ ক্যাম্পে সক্রিয় ২০টি সংগঠন। এ ছাড়া ক্যাম্পে বিদ্যমান সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোও এ জোটের সঙ্গে কাজ করছে। তবে এ জোটের প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে আরেক জঙ্গি সংগঠন আরসা। এ জোট প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে ১৯ জুন কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দোয়া মাহফিলের নামে গণজমায়েত করে। আগামী ২৫ আগস্ট তারা ক্যাম্পে বড় ধরনের সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। ওই সমাবেশ থেকে প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। আরআরআরসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ শুরু হয়। তখন মিয়ানমারের কাছে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়। পরে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা তৈরি করে ফের বাংলাদেশের কাছে পাঠায় মিয়ানমার। তখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেও নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়নি। রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি ছিল। প্রতি বছর ক্যাম্পগুলোতে আনুমানিক ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে নতুন করে ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসে কমপক্ষে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।

সর্বশেষ খবর