শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাট

হাসান ইমন

প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাট

রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট

রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে বাঁশের খুঁটি ও শামিয়ানা টাঙানোসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন ইজারাদাররা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী রবিবার থেকে হাট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার আগেই হাটে পশু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। তবে এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি। আর হাটগুলো কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে। একই সঙ্গে হাটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারসহ থাকবে সব ধরনের ব্যবস্থা। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আট হাটে হবে ডিজিটাল লেনদেন। আগামী ২৯ জুন দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। সে হিসাবে ২৫ জুন থেকে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হবে। তবে ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ হাটের মধ্যে ১৯ হাটের প্রস্তুতি সেরেছেন ইজারাদাররা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের খিলক্ষেত থানাধীন মস্তুল চেকপোস্ট-সংলগ্ন পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গার হাট এখনো ইজারার কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে নয়টি হাটের ইজারা সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটিও ১০টি হাটের ইজারা শেষ করেছে। সরেজমিনে সাঈদনগর পশুর হাটে দেখা যায়, অস্থায়ী হাটের খুঁটি ও তাঁবুর কাজ শেষ। পাইকারদের থাকার জন্যও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক গরু এলেও ক্রেতারা আসছেন না। কেননা রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির মাঠের অস্থায়ী হাটেও। আফতাবনগর হাটে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে এবং এলাকার খালি জায়গাগুলোতে খুঁটি ও শামিয়ানা টাঙানোর কাজ শেষ করেছেন কর্মীরা। ইতোমধ্যে পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর থেকে ব্যাপারীরা ট্রাকে করে গরু নিয়ে এসেছেন। রাস্তার পাশে এবং খালি জায়গায় খুঁটির সঙ্গে গরু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। একই অবস্থা মেরাদিয়া হাটেরও। তবে কিছু স্থানে লাইটিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। আমুলিয়া ও সারুলিয়া হাটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন ইজারাদাররা। হাট দুটোর অনেক স্থানে পশু উঠেছে।

সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত সময়ের আগেই পশু নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সাঈদনগর হাটের ইসমাইল নামে এক গরুর ব্যাপারী বলেন, ‘আগে হাটে এলে ভালো জায়গায় পশু রাখা যায়। সঙ্গে নিজেদের থাকার জন্যও ভালো জায়গা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ট্রাকে করে পশু আনার ফলে অনেক পশুর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে একটু বিশ্রামেরও প্রয়োজন। তাই আগেই আনা হয়েছে।’ বেচাকেনা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখনো শুরু হয়নি। তবে কয়েকজন এসে দরদাম জিজ্ঞেস করে চলে গেছেন।’

হাট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা : পশুর হাটগুলোতে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা। এ ছাড়া হাটের নিরাপত্তার স্বার্থে থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প ও ওয়াচ টাওয়ার। পশুর হাটের নিরাপত্তায় এরই মধ্যে আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এবার প্রতিটি পশুবাহী গাড়িতে নির্দিষ্ট হাটের নাম লেখা স্টিকার লাগানো থাকবে। কেউ ইচ্ছা করলে সেই হাট ছাড়া পশু নামাতে পারবে না। এ জন্য প্রতিটি হাটে স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। এ ছাড়া পশুর ট্রাক ঘিরে কেউ চাঁদাবাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে হাটগুলো মনিটরিং করবে সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে ডিএনসিসি কোরবানির হাটগুলোর চুক্তিপত্র ও কার্যাদেশের শর্তাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালনসহ কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না সেসব বিষয় তদারক বা মনিটরিং করছে। এ লক্ষ্যে ১৫ সদস্যের মনিটরিং টিম গঠন করেছে সংস্থাটি।

আট হাটে ডিজিটাল লেনদেন : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হাট’ এই স্লোগানে এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আটটি কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে। এসব হাট থেকে পশু কেনাবেচার জন্য নগদে কোনো লেনদেনের প্রয়োজন হবে না। কোরবানির পশুর হাটে ক্যাশলেস লেনদেন হবে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার খামারির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এই লেনদেনের জন্য। সে ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে আর হাটে যেতে হবে না। গরুর মালিকরাও টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সমস্যায় পড়বেন না।

ডিএনসিসির আওতাধীন কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে যে আটটি হাটে ‘স্মার্ট হাট’ হিসেবে ডিজিটালি লেনদেন হবে, এগুলোর মধ্যে আছে- উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর)-সংলগ্ন খালি জায়গা। কাওলা শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত (যা সাবেক বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ), মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফুট রাস্তা-সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুরের গাবতলী গবাদিপশুর হাট, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড নম্বর-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গায় বসা হাট। ডিএনসিসির পশুর হাটে ১০টি ব্যাংক- এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম (এমেক্স, মাস্টারকার্ড ও ভিসা), চারটি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

সর্বশেষ খবর