শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আসন্ন ঈদুল আজহায় সারা দেশ থেকে প্রায় ৯০ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে ট্যানারি মালিকরা। আর সংগৃহীত চামড়া যথাযথ প্রক্রিয়াকরণের স্বার্থে ঈদের দিন থেকে টানা তিন মাস ট্যানারিগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ না পেলে প্রক্রিয়াকরণ সমস্যায় সংগৃহীত চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ট্যানারি মালিকদের ১৮০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। কোরবানির পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় চামড়া সংগ্রহের জন্য সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় লবণের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি মূল্য স্থিতিশীল রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে তদারকির অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে দুটিা সভা হয়েছে। সভার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে ডিসি, ইউএনওদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৬ জুন অনুষ্ঠেয় সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য ঘোষণা করবেন।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, ডিসিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মূলত চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১) সরকার নির্ধারিত মূল্যে পশুর চামড়া কেনা-বেচা নিশ্চিত করা; ২) চামড়া ছাড়ানোর পর লবণ দিয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণে উৎসাহিত করা; ৩)  সারা দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে লবণের সরবরাহ নিশ্চিত করা যাতে দ্রুত চামড়ায় লবণ লাগানো যায় এবং ৪) কোরবানির পর যথাযথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

ট্যানারি মালিকদের তিন ভয় : এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে ট্যানারি মালিকরা সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন বৃষ্টি, বিদ্যুৎ এবং লবণ নিয়ে। বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসছে ঈদে আমরা প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছি। চামড়া কিনতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ১৮০ কোটি টাকা দিচ্ছে। এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি তিনটি বিষয়ে আমাদের শঙ্কা আছে। ভরা বর্ষায় ঈদ হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে চামড়া ছাড়ানোয় সমস্যা হলে এবং যথাযথ লবণ লাগাতে না পারলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। লবণ সরবরাহ ও দাম নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে বাজারে ক্রুড লবণের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া চামড়া সংগ্রহের পর ট্যানারিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। সূত্রগুলো বলছে, গত ১ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভাতেও ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন এসব ইস্যু তুলে ধরে। সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায় সেখানে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিন মাস ট্যানারিগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান ট্যানারি মালিকরা। কোরবানির সময়ে লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় এমন দাবি করে লবণ আমদানির সুপারিশ জানান ট্যানারি মালিকরা। পরে গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় সভায় চামড়া সংগ্রহে যেসব সুপারিশ উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সরকার ঘোষিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়; কাঁচা চামড়ার সুষ্ঠু ব্যবহার; পরিবহন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহায়তা দিতে দেশব্যাপী মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনায় মনিটরিং টিম গঠন; কাঁচা চামড়ার গুণগত মান রক্ষায় পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা দূর করা; লবণ ছাড়া চামড়া ঢাকায় ঢুকতে না দেওয়া; মাঠপর্যায়ে সুলভ মূল্যে লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা; ঈদের পর সাত দিন বাইরে থেকে কাঁচা চামড়া ঢাকায় ঢুকতে না দেওয়া এবং চামড়া পাচার বন্ধে সীমান্তসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তদারকি বাড়ানো।

সর্বশেষ খবর