উজানের ভারী বর্ষণ ও নেমে আসা ঢলে তিস্তা এখনো ফুলেফেঁপে রয়েছে। পানি বাড়ায় ঈদ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এদিকে, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যা নিয়ে উত্তরের মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
রংপুর : কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানির প্রবাহ ওঠানামা করায় নদীর চর ও তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নই নদীবেষ্টিত। কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধির ফলে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। এখনো অনেক স্থানে পানি রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। বিকালে কিছুটা কমে ৫১ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫০ সেন্টিমিটার। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার পানি বাড়ায় এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। লালমনিরহাট : পানি বাড়ায় পবিত্র ঈদুল আজহার আগে তিস্তাতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এ বছর হয়তো পানিতে ডুবে থেকে ঈদ উদযাপন করতে হবে। পাউবোর লালমনিরহাট কার্যালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। তিস্তা নদী-তীরবর্তী লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে যেতে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। পাউবোর লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায় বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করেছে। এ কারণে তিস্তায় পানি বেড়ে যেতে পারে। পানির স্রোতের কারণে নিয়মানুযায়ী তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধা : গত ২৪ ঘণ্টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৩ সেন্টিমিটার, শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি ও কুন্দেরপাড়ায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় হরিপুর খেয়াঘাট এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, নদনদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : গত দুই দিনে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামে অন্তত ২০টি বসতবাড়িসহ অর্ধশত গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব বাড়িঘরের অসহায় মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে ভাঙন শঙ্কায় ঘরবাড়ি ও আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় স্বচ্ছল কৃষকরা সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার সরকার জানান, বন্যায় চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইল : জেলার মির্জাপুরে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝিনাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থশতাধিক বাড়ি এ ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ ছাড়া কুর্নি-ফতেপুর পাকা সড়কটি ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।সুনামগঞ্জ : সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাতকের কোনো লোকালয় এখনো প্লাবিত হয়নি। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি গতকাল ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো জেলার কোথাও কোনো এলাকা পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পাউবো আরও জানায়, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।