সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার আশুলিয়ায় বিমল চন্দ্র মন্ডল হত্যায় মো. হাফেজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুটি সিগারেটের সূত্র ধরে এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।

 পিবিআই জানায়, অনেকদিন ধরে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করছিলেন হাফেজ। টাকার জন্য দুটি রিকশা চুরি করে বিক্রি করেন। সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল বিমল চন্দ্র মন্ডলের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেন হাফেজ। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরত-ই-খুদা। তিনি বলেন, নিহত বিমল চন্দ্র মন্ডল সপরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় থাকতেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বিমল বাসায় থাকেন এবং জীবিকার তাগিতে তার স্ত্রী এবং কন্যা গার্মেন্টে চাকরি করেন। গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বিমলের স্ত্রী ও মেয়ে গার্মেন্টে চলে যায়। প্রতিদিনের মতো বিমল একাই বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরে ডিউটি শেষ হওয়ার পর বিকালে বিমলের মেয়ে পূর্ণিমা রানি মন্ডল বাসায় গিয়ে তার বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুখের ভিতরে কাপড় কাটার কাঁচি (সিজার) ঢুকানো অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পারুল অজ্ঞাতদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। আশুলিয়া থানা পুলিশ ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে। এরপর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলাকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়। পিবিআই কর্মকর্তা কুদরত বলেন, ঘটনার ৬ মাস আগে বিমল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধূমপান ছেড়ে দেন। কিন্তু হত্যাকান্ডের দিন নিহত বিমলের বাসায় সিগারেটের দুটি শেষাংশ পাওয়া যায়। আর এ সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্তে অগ্রসর হয় পিবিআই। পরে বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। ওই তালিকার মধ্যে হাফেজও ছিলেন। তদন্তের একপর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আশুলিয়ার জিরানী বাজার থেকে হাফেজকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও বলেন, নিহত বিমলের স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হাফেজের স্ত্রীও গার্মেন্টে চাকরি করেন। এ সুবাদে হাফেজ মাঝে মধ্যেই নিহতের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় হাফেজ যান বিমলের বাসায়। ওই বাসার লোক সবাই গার্মেন্টে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিল। হাফেজ ও বিমল একসঙ্গে টিভি দেখেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে বিমলকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠান হাফেজ। ওই সময় হাফেজ বিমলের স্ত্রীর অলংকার ও টাকা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। সিগারেট নিয়ে বাসায় এসে দেখেন হাফেজ ঘর অগোছালো করে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছেন। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলার ডান পাশে আঘাত করেন। পরে বিমলের মুখে কাঁচি ঢুকিয়ে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারিতে থাকা ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে তিনি ওই স্বর্ণ বিক্রি করে ফেলেন। গ্রেফতারের পরদিন হাফেজকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চুরি করা স্বর্ণালংকার বিক্রিতে যারা সাহায্য করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা কুদরত।

সর্বশেষ খবর