বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স

জুনের ২৫ দিনে এসেছে ২০২ কোটি ডলার, গত বছরের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি

শাহেদ আলী ইরশাদ

আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অর্থনীতি যখন সংকটে পড়েছে, তখন গত কয়েক মাসের তুলনায় বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স আসার খবর নতুন করে আশা জাগাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৫ দিনে প্রবাসীরা ২০২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটি গত বছরের একই মাসের প্রথম ২৩ দিনের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। গত বছরে জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৮  কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি মাসে পাওয়া রেমিট্যান্স গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুন মাসের বাকি পাঁচ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছু বাড়লে দুই বছরের মধ্যে এটি হবে এক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ জুলাই থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর প্রবাসীদের পাঠানো ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে এ বছর। সাধারণভাবে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মতো বড় অনুষ্ঠানের আগে রেমিট্যান্স বেড়ে যায়। কারণ প্রবাসীরা দেশে পরিবারের ঈদ উদযাপন করার জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠায়। আগামীকাল দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

যখন রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খবর এসেছে তখন সরকার বলছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার অভিবাসী কর্মী চলতি অর্থবছর চাকরির জন্য বিদেশে গেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ সোমবার সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ জুনের মধ্যে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা আগের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ ৭ হাজার শ্রমিক বিদেশে গিয়েছিলেন। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে যে পরিমাণ শ্রমিক বিদেশে গেছে, সে পরিমাণ প্রবাসী আয় দেশে আসেনি। অর্থনীতিবিদ এবং বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়ানোর জন্য ডলারের একাধিক বিনিময় হার বাতিল করে বাজারভিত্তিক দর নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রবাসী শ্রমিকরা জানিয়েছেন হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠালে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে ৩ থেকে ৫ শতাংশ বেশি অর্থ পাওয়া যায়। একই সঙ্গে অর্থ পাঠানো বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রেরক বা সুবিধাভোগীদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। সংশ্লিষ্টদের ধারণা মতে, করোনভাইরাস মহামারির আগেও রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেকই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছিল।

বিশ্বব্যাংক গত মাসে বলেছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলে বিনিময় হারের বিস্তর ব্যবধান। কারণ বিনিময় হারের ব্যবধান রেমিট্যান্সকে বৈধ চ্যানেল থেকে অবৈধ চ্যানেলে স্থানান্তরিত করে এবং রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনে বাধা দেয়। ব্যাংকিং চ্যানেল এবং হুন্ডিতে প্রবাসী আয়ের বিনিময় হারের তফাতের কারণে মোট রেমিট্যান্সের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হুন্ডিতে লেনদেন হয়। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী করতে সরকার ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করছে এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা চালু করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ফি মওকুফ করা হয়েছে।

সরকারের তথ্য মতে, বর্তমানে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী বিশ্বের ১৭৬টি দেশে কাজ করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী আরও বলেন, জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে লিবিয়া, মাল্টা, আলবেনিয়া, রোমানিয়া এবং সার্বিয়া। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১ লাখ ১৪  হাজার প্রবাসী শ্রমিক অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ২ হাজার ৮১ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর