বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ প্রার্থী সভায় না আসায় সিইসির উষ্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রথম সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত না আসায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটের প্রচারে ‘অতি উৎসাহী’ না হয়ে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে ‘সহিষ্ণু আচরণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ ১৭ জুলাই। সোমবার প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সম্মেলন কক্ষে গতকাল বেলা ১১টায় এ উপনির্বাচনের আট প্রার্থীকে নিয়ে আচরণবিধি  প্রতিপালন বিষয়ক সভা হয়। এতে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, প্রার্থী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক যথাসময়ে শুরু হয়। তবে প্রায় আধ ঘণ্টা পর নৌকার প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে সভায় উপস্থিত হন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার। এ সময় সিইসি সবার উপস্থিতিতে ওই প্রতিনিধির কাছে তার পরিচয় জানতে চান। মোহাম্মদ আলী আরাফাতের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন, জানান তিনি। মাইক বন্ধ করে কিছুটা উষ্মার সুরে সিইসি বলেন, ‘উনি কেন আসেননি, প্রতিনিধি কেন এলেন, মিটিং শুরুর আধা ঘণ্টা পরে কেন এসেছেন।’ এ সময় প্রসঙ্গক্রমে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সময়ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে মতবিনিময়ে না পাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন সিইসি। জবাবে আরাফাতের প্রতিনিধি বৈঠকে বলেন, প্রার্থী অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী আরাফাত গতকালই (সোমবার) ইসির মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণপত্র পেয়েছিলেন। তিনি দু-তিনটি প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার পর অসুস্থ বোধ করছেন। তার জ্বর। তিনি নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সভায় না এসে আমাকে পাঠিয়েছেন।’ প্রতিনিধি হয়ে বিলম্বে সভাস্থলে পৌঁছানোয় সিইসির জেরার মুখে পড়ে প্রার্থীর পক্ষে সভায় আর কোনো বক্তব্যও রাখেননি, জানান তিনি।

সিইসির কঠোর হুঁশিয়ারি : সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস আগে ব্যালট পেপারে হতে যাচ্ছে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন কোনো ধরনের কারচুপি বা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন সিইসি। তিনি বলেন, আমরা আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টির জন্য আপনাদের ডেকেছি।... আমরা কোনোভাবেই চাই না আচরণবিধি ভঙ্গ হোক। আমরা আশা করি, সেটা হবে না। সিইসি বলেন, আমাদের কথা স্পষ্ট, আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করব। অতীতেও আমরা এ চেষ্টা করেছি। ক্ষেত্র বিশেষে আমরা প্রার্থিতাও বাতিল করেছি। ওই রকম কোনো ঘটনা আশা করি ঘটবে না। আপনারাও সচেতন। আপনারা সংসদ সদস্য হয়ে আইন প্রণয়ন করবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। এটা একান্তভাবে কাম্য। ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের সহিষ্ণু হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, কাউকে আক্রমণ করবেন না। আক্রমণাত্মক কথা বলবেন না। মিছিল করতে গিয়ে ঢিল ছুড়বেন না। দোষারোপ করে বক্তব্য দেওয়াটা পরিহার করে চলা ভালো। মিথ্যা প্রচার আপনার বিরুদ্ধে হলে সেটা কাউন্টার করবেন ভদ্রভাবে। অহিংসভাবে। সহিংসতার আশ্রয় নেবেন না। সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচন সিসিটিভি দিয়ে নিবিড়ভাবে মনিটর করব। অনেকে পেশিশক্তি লাগিয়ে ব্যালটে সিল দিয়ে স্টাফিং করতে থাকেন। সেটা কিন্তু করবেন না। এমনও হতে পারে আমরা চিহ্নিত করতে পারলাম না। সেক্ষেত্রে আমরা টোটাল ভোট বন্ধ করে দিতে পারব, যদি বুঝি এটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। তখন সার্বিক ভোট বিপন্ন হবে, বাধাগ্রস্ত হবে। জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হলে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। ভোটে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের অনুরোধ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট না থাকলে ভোটের ক্ষেত্রে আপনারা অনেকটাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বেন। কেউ অন্যায় আচরণ করছে কি না, কারচুপি হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য পোলিং এজেন্ট লাগবে। ভোটারদের বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে কমিশন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) এবং তরিকুল ইসলাম ভুঞা অংশ নেন সভায়।

সর্বশেষ খবর