রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানি বাড়ছেই উত্তরাঞ্চলে

বিশেষ প্রতিনিধি

পানি বাড়ছেই উত্তরাঞ্চলে

নেত্রকোনায় নদীতে বেড়েছে পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত। তিস্তা চরের তীরবর্তী ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবার। কুড়িগ্রামে প্রধান নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এদিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে বইছে। সুনামগঞ্জেও টানা বর্ষণে ভোগান্তির তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার দেড় মিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৯ মিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ১ দশমিক ৭১ মিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১ দশমিক ৩৭ মিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে রংপুরের ছোট নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। যমুনেশ্বরী নদী বদরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ দশমিক ৬২ মিটার ও ঘাঘট নদী জাফরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৩৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম গতকাল বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় এ অঞ্চলের পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এদিকে কুড়িগ্রামে উজানের ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টির কারণে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি ফের নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সব নদ-নদীর পানি নতুন করে বাড়ছে। তবে এখনই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানের পানির ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়লেও এখন বন্যা পরিস্থিতি তৈরির কোনো আশঙ্কা নেই।

অপরদিকে লালমনিরহাটেও উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে ও নিচে উঠানামা করছে। এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঈদের দিন থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন চরের বাসিন্দারা। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানির নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিস্তা চরের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে পড়ে নদীপাড়ের প্রায় ৩ হাজার পরিবার। গতকাল বিকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ প্রায় ৩ হাজার মানুষ ঈদের দিন থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এদিকে টানা বর্ষণে বেড়ে চলেছে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি। জেলার সীমান্ত এলাকার নদীগুলোতে হু হু করে বাড়ছে পানি। কলমাকন্দার গণেশ্বরী ও দুর্গাপুরের সোমেশ্বরীর শাখা নদী কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীতে শুক্রবার রাত থেকে পানি বিপৎসীমার ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও উপজেলার মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, পাহাড়ি ঢল আর বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা এখনো নেই।

অপরদিকে সুনামগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, চেলাসহ জেলার প্রধান প্রধান নদীর পানি বেড়েছে।

এদিকে, জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা ও আনোয়ারপুর এলাকার সাবমার্জেবল অংশ পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদে বাড়ি থেকে কর্মস্থল ফেরত মানুষসহ এলাকাবাসী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর