সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্যায় তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

নৌকা ডুবে তিন ভাইবোনের মৃত্যু বিপৎসীমার ওপরে নদনদীর পানি অনেক এলাকায় পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যায় তলিয়েছে নিম্নাঞ্চল

সুনামগঞ্জে বন্যায় প্লাবিত জেলা সদরের কাজির পয়েন্ট এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে গেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন নদনদীর পানি। সিলেট সিটি করপোরেশন ও সুনামগঞ্জ শহরে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে বন্যার পানি বাড়ায় আতঙ্কে নৌকা পার হতে গিয়ে হাওরে ডুবে তিন ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে বইছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন-

সিলেটে টানা ভারী বর্ষণে নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। দিনভর সেই জলাবদ্ধতায় ভুগেছেন নগরবাসী। একই সঙ্গে কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে সিলেটের নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠা শুরু হয়েছে। সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা ও ধলাইসহ জেলার বিভিন্ন নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারার পানি শেওলা পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ১০.৮১ মিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বেড়ে ৯.১৫ মিটার, শেরপুরে ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে ৭.৮০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। তবে লোভাছড়া ও সারি নদীর পানি কমলেও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

টানা বর্ষণের কারণে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু করেছে।  কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিম ইসলামপুর, উত্তর ও দক্ষিণ রণিখাই, তেলিখাল এবং ইছাকলস ইউনিয়নের নিচু এলাকার রাস্তাঘাট প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলের লোকজন নৌকা দিয়ে চলাফেরা করছেন। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এসব ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও, খাদিমনগরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরসহ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। নগরীর দাড়িয়াপাড়া, বিলপাড়, সাদিপুর, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে যায়। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় পানিতে। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

ভারী বর্ষণের ফলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় পানি ওঠে যায়। ফলে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন রোগী, তাদের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই অবস্থা তৈরি হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজে। কলেজের নিচতলায় প্রায় ১ ফুটের ওপরে পানি ওঠে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘হাসপাতালের পেছনের ড্রেন উপচে হু হু করে পানি ঢুকছে। নিচতলার পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। একেকটি কক্ষে হাঁটুসমান পানি।’ এদিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় অব্যাহত রয়েছে পাহাড়ি ঢল। এর ওপর ভারী বর্ষণ। নদীর নাব্যতা দিন দিন কমে যাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলসহ নদী তীরের নিচু এলাকা। গ্রামীণ সড়ক যাচ্ছে ডুবে। মানুষ নৌকা নিয়ে পারাপার হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে কলমাকান্দার গণেশ্বরী ও দুর্গাপুরের সোমেশ্বরীর শাখা নদী কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীতে গতকাল বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কলমাকান্দা উপজেলার মনতলা গ্রামের ইসবপুর সড়কের ওপর দিয়ে মহিষাশুর হাওরে ঢুকছে পানি। যার কারণে ইসবপুর মনতলা এলাকার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণে জেলা শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও নদনদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে সীমান্ত এলাকা ও নিম্নাঞ্চল। পানির নিচে তলিয়ে যায় কাজির পয়েন্ট, হুসেন বখত চত্বর, বিলপাড়, জমতলা এলাকার অনেক সড়ক। দুর্ভোগে পড়েন পানিবন্দি শহরবাসী। ভারী বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ক্রমেই বাড়ছে নদনদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলার তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা ও আনোয়ারপুর এলাকার সাবমার্জেবল অংশ পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক জানান, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও শুকনো খাবার রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সুমামগঞ্জ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে নৌকাডুবিতে তিন সহোদর ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে বন্যার পানি বাড়তে দেখে আতঙ্কিত ওই তিন শিশু একটি ভাঙা ডিঙি নৌকা নিয়ে হাওর পাড়ি দিয়ে মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- গোবিন্দপুর গ্রামের সোহেল মিয়ার শিশুসন্তান ফারজানা (১৩), মারজানা (৮) ও রবিন (৪)।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর