সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন

ভ্যাট নির্ভরতায় আর্থিক ঝুঁকির শঙ্কা সরকারের

কর অব্যাহতিতে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত এনবিআর

রুহুল আমিন রাসেল

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে শুধু ভ্যাটের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের অধিক নির্ভরশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন সমালোচনা করে আসছিলেন অংশীজনরা। এবার সেই সমালোচনা সত্যি হয়ে উঠে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, এনবিআর মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশই আয় করছে ভ্যাট থেকে। মূল্য সংযোজন কর- মূসক বা ভ্যাট আদায়ের ওপর এনবিআরের এই নির্ভরতায় মধ্যমেয়াদে আর্থিক ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে সরকার। অন্যদিকে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর অব্যাহতির কারণে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে এনবিআর সূত্র।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এনবিআর রাজস্ব আয়ের শর্টকার্ট রাস্তা খুঁজছে। তারা কষ্ট করতে চায় না। আর ভ্যাট শর্টকার্ট আদায় করা যায়। তাই এনবিআর ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দেয়। এনবিআর ভ্যাট আদায়ে যত তৎপর, আয়কর আদায়ে তত তৎপর হয় না। এটা দুঃখজনক। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ বলেন, ভ্যাট সহজে আদায় করা যায়। এখানে কেউ ভয়ে মুখ খোলে না। কথাও বলে না। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকিও দিচ্ছে। আবার তাদের কর অব্যাহতিও দেওয়া হচ্ছে। ফলে আর্থিক ঝুঁকিও বাড়ছে। এই সংকট উত্তরণে কর্মকর্তাদের স্বচ্ছ চিন্তা লাগবে।

অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিসংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই সময়ে এনবিআরের মোট রাজস্বের ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ এসেছে মূসক বা ভ্যাট থেকে। আয়কর খাত থেকে এসেছে ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক থেকে ১৪ দশমিক ৩৭, আমদানি শুল্ক থেকে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ২ শতাংশের কিছু বেশি এসেছে আবগারি, রপ্তানি শুল্ক ও অন্যান্য কর থেকে। এভাবে কিছু নির্দিষ্ট উৎস থেকে কর আদায়ের নির্ভরতা আর্থিক ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ঝুঁকি কমাতে রাজস্ব আয়ের নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করা দরকার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নিয়েছিল এনবিআর। যদিও এ সময়ের মধ্যে সংস্থাটির রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্যের প্রায় ৮৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর। অর্থবছরের পুরো সময়ে এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

ওই প্রতিবেদন বলছে, আয়কর, ভ্যাট এবং শুল্ক এনবিআর রাজস্বের প্রধান তিনটি খাত। এর মধ্যে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি কমে ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৬ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্বের ৫৪ শতাংশই আসে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে। আয়কর খাত থেকে আসে প্রায় ৩৩ শতাংশ। আরও কয়েক খাত থাকলেও সেখান থেকে সামান্য রাজস্ব আদায় হয়। এসব খাত থেকে রাজস্ব বাড়ানো উচিত বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।

প্রসঙ্গত, সদ্য শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে ভ্যাট থেকে।

এদিকে এনবিআর সূত্র বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর অব্যাহতির কারণে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এমন কর অব্যাহতির কারণে অর্জিত হচ্ছে না রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই কর রেয়াতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে কর অব্যাহতির পরিমাণ বেড়েছে ৫২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৪২ শতাংশ। কর অব্যাহতিকে আক্ষরিক অর্থে বলা হয় ‘প্রত্যক্ষ কর ব্যয়’ বা ডিরেক্ট ট্যাক্স এক্সপেনডিচার।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর