সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফাঁসির আদেশ রহিত মুক্তি পেলেন মুক্তিযোদ্ধা রাখাল নাহা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

দীর্ঘ ২৪ বছর কারা ভোগের পর কুমিল্লা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের বহুল আলোচিত দীনেশ চন্দ্র দত্ত হত্যা মামলায় এ সাজাভোগ করেন তিনি। এর আগে রাষ্ট্রপতি তার ফাঁসির দন্ডাদেশ রহিত করলে তিনি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করেন। এর মধ্যে জেলখানায় সদাচরণের জন্য ৫ বছর ৭ মাস সাজা রেয়াত পান তিনি। মুক্তি পাওয়ার পর রাখাল চন্দ্র নাহা প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফাঁসি নিশ্চিত জেনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সাংবাদিক সমাজ, আমরা মুক্তযোদ্ধার সন্তান এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর চেষ্টায় আমার ফাঁসি রহিত হয়। আমি নব জীবন লাভ করি। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি এটাই বুঝেছি যে, ‘৭১ এ যুদ্ধে গিয়ে ভুল করিনি। এ বিষয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ হুমায়ূন কবির বলেন, স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি মেনে নিতে পারিনি বলেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। আজ সেই আন্দোলন পূর্ণতা পেল। আমরা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসন চাই।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হোসেনপুর গ্রামে প্রতিবেশী দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে নিখিল চন্দ্র। হত্যা মামলা দায়ের করার পর সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানা পুলিশ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাখাল চন্দ্র নাহাকে গ্রেফতার করে। নেপাল চন্দ্র নাহা পলাতক অবস্থায় মারা যান। পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে রাখাল চন্দ্র ও তার ভাই নেপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) খান আবদুল মান্নান অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের পক্ষ থেকে দেবিদ্বারে এবং ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা এই মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দন্ড রহিত করার দাবি জানান। এ আন্দোলনে যোগ দেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও। পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টি গোচর হয়। তিনি রাষ্ট্রপতিকে এ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দন্ড মওকুফের জন্য অনুরোধ করেন। ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি তা রহিত করেন। ২৫ জুন রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদন্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন।

 

সর্বশেষ খবর