মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভেজাল মদের বিশাল বাণিজ্য

হোতাদের উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সিআইডি

মাহবুব মমতাজী

ভেজাল মদের বিশাল বাণিজ্য

ওয়্যারহাউস থেকে বৈধ মদ অবৈধ প্রক্রিয়ায় বের করে বার, রেস্তোরাঁ ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছিল একটি চক্র। ওইসব মদের সঙ্গে স্পিরিট মিশিয়েও ভেজালে পরিণত করা হতো। এভাবে ভেজাল মদের বাণিজ্যে কোটিপতি হয়েছেন চক্রটির হোতা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৩০টি মাদকদ্রব্য আইনে মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব মামলাকে ঘিরে ওই ব্যক্তির সম্পদের উৎস নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় নকল মদের কয়েকটি চক্রের একটি হলো হুমায়ুন কবির ওরফে কবির গাজীর। তার চক্রে আছেন ভাই মাসুদ গাজী ও ভাগ্নে ইমরান। এদের কাছে স্পিরিট, নকল মদের লেবেল, বোতলের কর্ক সরবরাহ করতেন পুরান ঢাকার মনির নামে এক ব্যক্তি। জানা গেছে, ঢাকায় পাঁচটি বৈধ ওয়্যারহাউস থেকে লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরা মদ নিতে পারেন। ওই পাঁচটি ওয়্যারহাউস হলো- গুলশান-১ এর এসটিএল সাবের ট্রেডার্স, মহাখালীর এসকে কবীর এন্টারপ্রাইজ, টসবন, ন্যাশনাল ও ঢাকা ওয়্যারহাউস। বিদেশি পাসপোর্টধারী যে কেউ মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক বোতল মদ এসব ওয়্যারহাউস থেকে কিনতে পারেন সস্তা দামে।

কবীরের নামে একাধিক মাদক মামলা থাকায় তার সম্পদের উৎসের খোঁজে কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

এ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়্যারহাউস থেকে মদ কিনে গাড়িতে লুকিয়ে রাখে। এরপর ভেজাল বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে সংখ্যা বাড়ায়। এরপর কবিরের লোকজন ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়। গুলশান-বনানী এলাকায় বহু বাসাবাড়িতে এভাবে মদ বিক্রি করা হতো। অবৈধভাবে এভাবে তিনি মাসে কোটি কোটি টাকার মদ বিক্রি করেন। কবিরের ভাটারার নূরেরচালা ও গাজীপুরে তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। বাড্ডায় একটি ১০ তলা বাড়িও আছে তার। ভাই-ভাগ্নেসহ একাধিক বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে অভিজাত এলাকায় তিনি দীর্ঘকাল ধরে অবৈধভাবে মদ সরবরাহ করে আসছেন। ফারুক নামে এমন আরেক কারবারীকে নিয়েও অনুসন্ধান চলছে। স্পিরিটের সঙ্গে পোড়া চিনি, মিনারেল ওয়াটার, রং মিশিয়ে ভেজাল মদ তৈরি করা হতো। প্রতি ২৭ লিটার স্পিরিট দিয়ে কমপক্ষে ৫২ বোতল নকল মদ তৈরি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কবির গাজীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় মাদকের মামলা হয়। ৯ ও ১১ মার্চ আরও দুটি মামলা হয়। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। ২০ জুন আরেকটি মামলা হয়। একই থানায় একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়। একই বছরের ৩০ জুন মিরপুর মডেল থানায় আরেকটি মামলা হয়। ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। ২০২০ সালের ৯ জুন বনানী থানায় একটি মামলা হয়। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি ভোলা সদর থানায় আরেকটি মামলা হয় এবং ২৬ মে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কোনো মাদক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা যখন কারও বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক কিছু পেয়ে থাকেন তখন তারা বিষয়টি সিআইডিকে অবহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অনুসন্ধান চালায়। সেই অনুসন্ধানের পর মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হয়। জানা যায়, ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের ‘ব্যাম্বু শট’ নামের রেস্তোরাঁয় একটি পার্টিতে অংশ নেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় বাইরে থেকে নকল ও বিষাক্ত মদ কিনে ওই রেস্তোরাঁয় বসে পান করেন পাঁচ শিক্ষার্থী। মদ পান করার পর আরাফাত ও তার এক বান্ধবী মারা যান। এর মধ্যে ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ভাটারার বাসায় নকল মদ খেয়ে স্বর্ণালী বাগচী তন্বী ও তার দুই বন্ধু শরীফুল ইসলাম নাঈম ও সারোয়ার হোসেন অভি মারা যান। একই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের একটি রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করেছিল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ওই পার্টিতে অংশ নেওয়া তিনজন এরই মধ্যে বিষাক্ত মদ পান করে মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও অন্তত ১০ জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর