বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে দল উপদলে বিভক্ত আওয়ামী লীগ

সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে দল উপদলে বিভক্ত আওয়ামী লীগ

রাজশাহী-৬ আসনে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন রায়হানুল হক। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী। হেরে যান রায়হান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল মনোনয়ন দেয় শাহরিয়ার আলমকে, তিনি বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। এবার রায়হানুল হক বিদ্রোহী হোন। আক্কাস পক্ষ নেন শাহরিয়ার আলমের। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও রায়হান-আক্কাস আর বিদ্রোহী হননি। এ ছাড়া বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে নিয়েও অস্বস্তি ছিল আক্কাসের। এবার সব ভুলে শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে ওই আসনে একাট্টা রায়হান-আক্কাস-লাভলু।

শুধু রাজশাহী-৬ আসনে নয়, রাজশাহীর সব আসনে বর্তমান এমপির বিপক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান নেতারা। নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এমপি বিরোধী নেতাদের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ফলে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগ এখন বিভক্ত। কর্মীরাও নানা উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

রাজশাহী-১ আসনে এখন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সেখানে তার বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আকতার ডালিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী। এখানে আকতারুজ্জামান, গোলাম রাব্বানী ছাড়াও মু-ুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান, তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হক, কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া জোটবদ্ধভাবে এমপির বিরুদ্ধে নেমেছেন। তারা ৯ বছর ধরেই ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাঠে।

রাজশাহী-২ আসনটি আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির। এমপির সঙ্গে শীতল যুদ্ধ আছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের। লিটন প্রকাশ্যে ফজলে হোসেন বাদশার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না রাখলেও, বাদশা ছাড় দেননি। বিভিন্ন সমাবেশে তিনি লিটনকে উদ্দেশ করে বক্তব্য রেখেছেন। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ এনেছেন তার বিরুদ্ধে। তবে খায়রুজ্জামান লিটন এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ছাড়া এই আসনটিতে মাঠের রাজনীতিতে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও তার স্বজনরা। সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ডাবলু সরকার যেসব এলাকায় প্রচারণায় গেছেন, সেখানেই ছাত্রলীগের একটি অংশ ডাবলুর ঘনিষ্ঠদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিত করেছে। পুলিশ দিয়ে হয়রানির অভিযোগও আছে। ফলে নির্বাচনের শেষ দিকে ডাবলু গণসংযোগ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

রাজশাহী-৩ আসনে দুবারের এমপি আয়েন উদ্দিন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই এলাকার মানুষের। অভিযোগ আছে- জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো কাজ নেই, যা তিনি করেন না। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রায়শ সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগ ও কৃষক লীগের নেতারা। এ আসনটিতে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আয়েন উদ্দিনের অভিযোগ, পবা-মোহনপুরে আওয়ামী লীগে যে বিভক্তি আছে, তা আসাদের তৈরি।

রাজশাহী-৪ আসনে এমপি এনামুল হক। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে সবসময় আলোচনায় থেকেছেন তিনি। এবার তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মাঠে নেমেছেন দলটির চার নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পিএম শফিকুল ইসলাম প্রকাশ্যে সমাবেশ করে এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শনিবার উপজেলা সদরে ঈদপুনর্মিলনীর নামে আয়োজন করা অনুষ্ঠানে এমপির নানা অপকর্ম তুলে ধরে বক্তব্য দেন নেতারা। আগামী নির্বাচনে এমপি এনামুল হককে প্রতিহতের ঘোষণা দেন চার নেতা। এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আমি দলীয় আরেকটি কর্মসূচিতে বাইরে আছি। এ নিয়ে কিছু জানি না।’

রাজশাহী-৫ আসনে এমপি ডা. মনসুর রহমান। এই আসনটির সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। আগে থেকে এই দুই নেতার সমর্থকরা বিভক্ত। নির্বাচন সামনে রেখে সেই বিভক্তি আরও বেড়েছে। পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় সব কর্মসূচি পালন করা হয় আলাদাভাবে। আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, তিনি যাতে আগামীতে মনোনয়ন না পান, সেজন্য একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। তিনিই মূলত আওয়ামী লীগ বিভক্ত করতে কাজ করছেন। রাজশাহীজুড়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, এর পেছনে ওই কেন্দ্রীয় নেতার সক্রিয় ইন্ধন আছে। কেন্দ্রকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলেও জানান দারা।

সর্বশেষ খবর