বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অনটনের জীবন, পেশা বদল

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

অনটনের জীবন, পেশা বদল

চাঁদপুরে মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্পীরা বলছেন, আর্থিক দৈন্য, মাটির সংকট ও দাম বৃদ্ধি এবং তৈরি করা মালামালের বেচাকেনা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়েই এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

এক সময় মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, মটকা, কলস, ফুলের টব, খেলনার খুব কদর ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে এসবের চাহিদা অনেক কমে গেছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অনেকে বাপ-দাদার এই পেশা পাল্টাতে পারছে না। কেউ কেউ বিলুপ্তপ্রায় মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। বংশ পরম্পরায় যারা এই পেশা ধরে রেখেছেন, তাদের সংসার চলে অতি কষ্টে। মাটির তৈরি মালামালের সঠিক দাম না পাওয়ায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা সন্তানদের ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারছেন না। 

হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুরে মৃৎশিল্পী শিলা রানী পাল ও সুচিত্রা পাল জানান, প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার কারণে এ শিল্প বিলুপ্তির পথে। শত কষ্টের মাঝেও চারটি পরিবার টিকে আছে। অন্য কাজ করতে অভ্যস্ত নয় বলেই বাপ-দাদার এই পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। মাটির দাম তিনগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও তিনগুণ বেড়েছে। বাধ্য হয়ে তারা কুমিল্লার বিজয়পুর, ফরিদগঞ্জের গল্লাক, মানুরী থেকে মাটির তৈরি সামগ্রী কেনে। তাদের স্বামীরা তা ফেরি করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনো রকমে চলে তাদের সংসার।

মৃৎশিল্পী পরেশ পাল জানান, আমরা বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরির সামগ্রীর তেমন চাহিদা নেই। মাটির দাম বেশি হওয়ায় জমির মালিকরাও ইটভাটায় মাটি বিক্রি করতে আগ্রহী। ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা মাটি কিনতে পারছি না। তবে বৈশাখী মেলায় কিছু খেলনা সামগ্রী বিক্রি হয়। তাই আমরা মাটির খেলনা তৈরি করি। এ ছাড়া সারাবছর ফুলের টব আর দধির পাতিল বিক্রি হয়। আমাদের বংশের অনেকেই বাড়ি-জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। অনেকে পেশা বদল করেছেন। আমরা চারটি পরিবার মৃৎশিল্প জড়িয়ে আছি। সরেজমিনে দেখা যায়, তাদের পরিবারের দুইজন একচালা টিনের ঘরে বারান্দায় বসে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করছেন। অন্যরা সেগুলোয় সাজ দিচ্ছেন ও তা রৌদে শুকাচ্ছেন। কেউ রোদে শুকানো জিনিসগুলো ঘরে সাজিয়ে রাখছেন।  চাঁদপুর বিসিক জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদরে ১০, শাহারাস্তীতে ২০, হাজীগঞ্জে চার,  ফরিদগঞ্জে ছয়জন মৃৎশিল্পের কারিগর রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ শিল্প বাঁচাতে মাটি তৈরি মালামালের ধরন পাল্টানোর প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন এই শিল্পের কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর