বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপৎসীমার কাছাকাছি তিস্তার পানি

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সিলেট সুনামগঞ্জে কমছে পানি

প্রতিদিন ডেস্ক

বিপৎসীমার কাছাকাছি তিস্তার পানি

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে তলিয়েছে ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের ও হবিগঞ্জে কালনী, কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। তবে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা এসব খবর পাঠিয়েছেন।

লালমনিরহাট : জেলার হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। তিস্তার বাম তীরে নদী তীরবর্তী   নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফসলের খেত পানিতে ডুবে গেছে। পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, দুপুরের পর থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম : জেলায় সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়ছে। তিন দিন ধরে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেশি বেড়েছে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদে। ধরলা নদীর শিমুলবাড়ী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের চর ও দ্বীপচরগুলোর অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এসব চরের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের পানির ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

হবিগঞ্জ : জেলায় বৃষ্টি থামলেও কমছে না নদ-নদীর পানি। কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো রয়েছে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় কালনী কুশিয়ারা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যা এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৩০ সেন্টিমিটার। খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১.২০, শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১২.৭৫, মাছুলিয়া পয়েন্টে ৯.০৫, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে ৮.৫৫, মার্কুলি পয়েন্টে ৮.০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ জানান, বৃষ্টি কমলেও উজানের পানি নামছে।

সিলেট : জেলার সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব নদীতে কমতে শুরু করেছে পানি। বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় নিম্নাঞ্চল থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে ১৫, ৫ ও ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৬৬ ও সিলেট পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার কমেছে। লোভা নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার, সারি নদীর পানি ৬২ সেন্টিমিটার ও ধলাই নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার কমেছে।

সুনামগঞ্জ : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় সব নদীর পানি কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সুরমা নদীর ছাতকে ৩ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ৯ সেন্টিমিটার ও দিরাই পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে পানির উচ্চতা। তবে ওই তিনটি পয়েন্টে এখনো নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩০, ৫ সেন্টিমিটার ও ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জগন্নাথপুরে ২ সেন্টিমিটার বেড়েছে নলজুর নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টি কমায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

নেত্রকোনা : জেলার কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে। নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা সকাল পর্যন্ত বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ডুবে আছে বেশ কিছু এলাকার গ্রামীণ সড়ক। সোমেশ্বরী, কংশ, মগড়া ও ধনুসহ অন্যান্য নদীর পানি রয়েছে বিপৎসীমার নিচে।

সর্বশেষ খবর