বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনী ভাবনায় ইসলামী দলগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নির্বাচনী ভাবনায় ইসলামী দলগুলো

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকলেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী দলগুলো। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর কোন দল কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ইসলামী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে রাজপথে না থাকলেও দৃষ্টি বিএনপির দিকেই। বিএনপি যদি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে ফেলতে পারে, তাহলে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান হবে একরকম। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে অবস্থান হবে আরেক রকম। জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল ১০টি। এর মধ্যে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক দল ছয়টি। এগুলো হলো- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া বাকি পাঁচটি দলই একসময় বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। এখন এই দলগুলোর মূল কোনো অংশই বিএনপির সঙ্গে নেই। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট নামে দুটি খন্ডিত অংশ বিএনপির সঙ্গে আছে, যাদের নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের বাইরে সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জানা গেছে, অধিকাংশ ইসলামী দল পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তাদের ওপর সরকারি মহলের শক্ত নজরদারি রয়েছে, যাতে ইসলামী দলগুলো কোনোভাবেই বিএনপির দিকে ঝুঁকে না পড়ে। জানতে চাইলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এই সংকট সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলছে। অচিরেই সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্ধারণ হবে জমিয়ত এককভাবে, না জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।’ ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিগুলোকে নিয়ে অচিরেই একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটাবে। এই দলগুলোর সমন্বয়ে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেব।’

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। আর এ জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার চাই।’ তিনি বলেন, তার দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে একটি জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। জোট গঠন হলে সমঝোতার ভিত্তিতে ভোট হবে। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল বলেন, খেলাফত মজলিস নির্বাচনমুখী দল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে ভোটে অংশ নেবে তার দল। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ১০০ আসনে ভোটের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া একটি জোট গঠনেরও চেষ্টা চলছে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে। জোট গঠন হলে খেলাফত মজলিস জোটের মাধ্যমে ভোট করবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, সংগঠনের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সারা দেশে তৃণমূলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের দফতর সচিব মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক এবং বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি দুটোই বিতর্কিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সুতরাং এ দুটোর বিপরীতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই পারে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে। কিন্তু গতকাল আরপিওতে সংশোধনী এনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও খর্ব করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে জাতীয় সরকারের অধীনে এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে। এ নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এই দাবি আদায়ে দুই বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করছি আমরা। সরকার এই দাবি মানতে বাধ্য হবে।’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জামায়াত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে নির্বাচনমুখী দল হিসেবে জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত করছে।’ জামায়াত স্বতন্ত্র, না অন্য দলের প্রতীকে ভোট করবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর