বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল

তিন জেলায় বেশি দুর্ভোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

তিন জেলায় বেশি দুর্ভোগ

কমলগঞ্জে মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উঠেছে পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাতের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কিছু এলাকা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মুষলধারে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে কমলগঞ্জ পৌরসভার নতুন নির্মিত নালার মুখ ধলাই নদীর সঙ্গে যুক্ত করার কারণে নালা দিয়ে পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভার ২, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে তিনটি ওয়ার্ডে প্রায় ২০০টি পরিবার ও ১০টি দোকানপাট।

গতকাল বিকালে সরেজমিন কমলগঞ্জ পৌরসভা  এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারী বর্ষণের কারণে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পৌরসভার ভিতর ধলাই নদীর পুরাতন সেতু সংলগ্ন এলাকার নালা দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে পৌর এলাকার চ-ীপুর, উত্তর আলেপুর, পানিশালাসহ চারটি গ্রাম, সড়ক, কমলগঞ্জ থানা, ডাকঘর, কমলগঞ্জ মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও আশপাশের বাড়িঘর নিমজ্জিত রয়েছে। ভারী বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলের পতনউষার, আলীনগর, আদমপুর ও মাধবপুর এলাকার আউশের জমি পানিতে ডুবে গেছে।

পানিবন্দি মানুষ জানান, অপরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ভিতর দিয়ে নালা করায় ধলাই নদীর পানি প্রবেশ করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। নালার মধ্যে সুইস গেট না দিলে নদীর পানি বাড়লেও আমরা পানিবন্দি হয়ে যাব।

কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করছি।

ঘটনাস্থল পর্যবক্ষণে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বন্যা পুনর্বাসন ও সতর্কীকরণ তথ্য অনুযায়ী উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনায় কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা, পৌরসভা ও উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুওয়ান বলেন, পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি ক্রমে বেড়েই চলেছে। নদনদীর পানি ক্রমাগত বেড়ে বুধবার বিকাল পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়ে অনেক ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নদনদী পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখানে মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, পানি প্রতিদিন থাকায় চরের বেশ কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। দ্বিতীয় দফা বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছেন চর ও দ্বীপচর বাসীরা। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। চরের নিম্নাঞ্চলের পাটখেত, করলা, ঝিঙে, শসা, পটল ও ঢেঁড়শ খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা নগদ টাকা, চাল ও শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় প্রদান করেছি। আবারও টাকা ও খাদ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রদান করেছি।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, উজানের ভারী ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপে ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ের বাসিন্দারা আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন।

সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে জুন মাসের শুরু থেকে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যে আছে। প্রথম দফা স্বল্প মাত্রার বন্যার পর পানির গতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও গতকাল ভোর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে ধীরে ধীরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফ উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বুধবার সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পানির স্তর কিছুটা বেড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে আমরা ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ করেছি। এ ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর