বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তি হবে দ্রুত

ঢাকা চট্টগ্রামে হচ্ছে আরও ১৭ অর্থঋণ আদালত

আরাফাত মুন্না

খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও ১৭টি অর্থঋণ আদালত গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ঢাকায় ১৩টি এবং চট্টগ্রামে চারটি অর্থঋণ আদালত গঠন করা হবে। এসব আদালতের জন্য যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার ১৭ জন বিচারকসহ ১০২টি পদ সৃজনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নতুন এই অর্থঋণ আদালতগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তিতে গতি আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংক ও আর্থিক খাত-সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকিং খাত বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে নিয়মিত মামলার পরিমাণ বাড়তে থাকা, শুনানিতে দীর্ঘসূত্রতা, আদালত সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এসব মামলার জট বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মামলার বিপরীতে মাত্র ১৭টি আদালত গঠনের প্রস্তাবও অপ্রতুল। তাই দ্রুত এসব আদালত গঠন করা জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালের শেষে অর্থঋণ আদালতে   মামলার সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ১৮৯টি। এসব মামলায় অর্থদাবির পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় মামলা বেড়েছে ৩ হাজার ৯১৮টি এবং মামলায় দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২৩ হাজার ১৯২ কোটি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অর্থদাবি সবচেয়ে বেশি বা ৭১ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ২ হাজার ৪৬৮ কোটি, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৮৮ হাজার ৮৫৮ কোটি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা দাবি জড়িত আছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে আট বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকায় চারটি, চট্টগ্রামে একটি, খুলনায় একটি ও ময়মনসিংহে একটি অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অন্য চার বিভাগে কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। ওই সব বিভাগ ও জেলা শহরে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারককে অর্থঋণ আইনে মামলা গ্রহণ ও বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই আদালতগুলোয় দাখিল করা নিয়মিত মামলার শুনানি গ্রহণের পাশাপাশি অর্থঋণ আইনে করা মামলারও শুনানি গ্রহণ করেন তারা। আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নতুন ১৭টি অর্থঋণ আদালত গঠনের লক্ষ্যে ১০২টি পদ সৃজনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ পদগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৭ জন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক, প্রতিটি আদালতের জন্য একজন করে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, বেঞ্চ সহকারী, ড্রাইভার, জারিকারক ও অফিস সহায়ক। প্রস্তাবটি বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার জন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে বিচারাধীন অর্থঋণ মামলার তুলনায় এ-সংক্রান্ত আদালতের সংখ্যা কম। এজন্য বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ঢাকায় ১৩টি এবং চট্টগ্রামে চারটি নতুন অর্থঋণ আদালত সৃজনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। এ আদালতগুলো হলে খেলাপি ঋণ আদায়-সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। একই সঙ্গে এসব মামলায় আটকে থাকা খেলাপি ঋণ আদায় করাও সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হুসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন করে ১৭টি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’ তিনি বলেন, এসব আদালত প্রতিষ্ঠা হলে ব্যাংকিং খাত-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এতে খেলাপি ঋণ আদায় অনেকটা সহজ হবে। সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, নতুন এসব আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থঋণ আদালতে মামলার সংখ্যা অনেক। সে অনুপাতে আদালতের সংখ্যা ও বিচারক খুবই কম। এ ছাড়া বিচারকাজ বিলম্বিত করতে খেলাপি গ্রাহকরা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এমনকি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে তারা আদালতে যথাসময়ে হাজির করেন না। ফলে মামলার অভিযোগ গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে যায়, দুর্ভোগ বাড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক মামলার বিপরীতে মাত্র ১৭টি আদালত একরকম অপ্রতুল। এর পরও এ উদ্যোগকে মন্দের ভালো বলা যায়। কারণ বর্তমানে মাত্র সাতটি ডেডিকেটেড অর্থঋণ আদালত রয়েছে। মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, এ আদালতগুলো গঠনের প্রস্তাব পাঠিয়েই কাজ শেষ করলে হবে না। দ্রুত আদালতগুলোর কার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় ডেডিকেটেড অর্থঋণ আদালত গঠন করতে হবে বলেও মনে করেন ব্যাংকিং আইন বিশেষজ্ঞ এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর