বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সাবেত পরিচয়ে লুকিয়ে ছিলেন জঙ্গি তালহা

সাখাওয়াত কাওসার

মাওলানা সাবেতেই লুকিয়ে ছিলেন ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা। সাবেত পরিচয়েই ভারত এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে ভারতীয় আধার কার্ডে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করান নুর হোসেন হিসেবে। বাগিয়ে নেন ভারতীয় পাসপোর্টও। সেখানে ঠিকানা ছিল, ভারতের কুচবিহারের সিংহীমারির মদনকুরা গ্রাম। তার স্ত্রী ফারিয়া আফরিন আনিকা ও আধার কার্ডে বনে যান মরিয়াম খাতুন। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি এ দম্পতির। সম্প্রতি রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে

ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা দম্পতিকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল। এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তালহা। এর বাইরেও তার কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য আদায় করা সম্ভব হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আবু তালহার ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছিল। সে একিউআইএসের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তার বিরুদ্ধে ভারতে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি গুজরাটে একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে কয়েকজন বাংলাদেশি গ্রেফতার হন। তাদের জবানীতেও তালহার নাম ছিল। এরই মধ্যে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়ে দেওবন্দে ভর্তি হয়েছিলেন তালহা। সেখানে আমান নামে একজনের মাধ্যমে একিউআইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে নুর হোসেন নামে ভারতীয় আধার কার্ড সংগ্রহ করেন। বাগিয়ে নেন ভারতীয় পাসপোর্টও। এক পর্যায়ে সংগঠনের দাওয়াতী শাখার প্রধান হন তিনি। তালহা একিউআইএসের সাংগঠনিক কাজে ভারতের কুচবিহার, ভোপাল, আসাম, দিল্লিসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অবস্থান করেছেন। অনলাইন ও অফলাইনে ক্লাস নিতেন সংগঠনে নতুন যোগ দেওয়া সদস্যদের। পাসপোর্ট ও আধার কার্ডে তালহার বাবার নাম ছিল সাবু মিয়া ও মাতার নাম নাবিয়া বেগম। ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে প্রায় মাস সাতেক আগে স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে এই দম্পতি। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘তালহা যে এনক্রিপ্টেট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন, তার সমস্ত আলাপচারিতা ও যোগাযোগ ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

একিউআইএসের সদ্য সাবেক প্রধান ওয়াসিম ওমরসহ দেশি-বিদেশি অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা ওসমান গনি ও শাইখ তামিম আল আদনানীর সঙ্গেও তার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আনসার আল ইসলামের নেতাদের সঙ্গে একিউআইএসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করতেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তালহা এবং সংগঠনের বিষয়ে ব্যাপারে জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’

 সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা। শুরুতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি মাদরাসা ও সূত্রাপুরের ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ২০০৭ সালে বেফাকের অধীনে হিফজ পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বাংলার পাশাপাশি তালহা উর্দু, আরবি ও ইংরেজি ভাষায়ও দক্ষ। ২০১৮ সালে তিনি ভারতের দেওবন্দে উচ্চতর পড়াশোনা করতে গিয়ে আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতারের পরও এই আবু তালহার বিষয়ে তথ্য এসেছিল। আবু তালহা তখন জঙ্গি গ্রুপে মাওলানা সাবেত নামে পরিচিত ছিলেন। এবার গ্রেফতারের পর খালেদও তালহাকে শনাক্ত করেছেন। সেই সাবেত ভারতে বসে ভারত ও বাংলাদেশের একিইউআইএসের সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতেন ও সদস্য সংগ্রহ করতেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল থেকে আটজন একিউআইএস সদস্য এবং চলতি বছরের ২৪ মে ভারতের গুজরাট থেকে আরও চার একিইউআইএস সদস্যের জবানীতেও তালহার নাম জানতে পারে ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারা বলেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে তালহা বাংলাদেশে ফিরে এসে এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়ে আসছিল।

সর্বশেষ খবর