শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
কমেছে তিস্তা ও সুরমায়

বরিশালে নদনদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই

প্রতিদিন ডেস্ক

বরিশালে নদনদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই

বরিশালে বাড়ছে কীর্তনখোলাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশালে নদনদীর পানি বেড়েছে। বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে এসব নদনদীর পানি। রংপুরে নদনদীর পানি বিপৎসীমায় ওঠানামা করছে। কমছে তিস্তা, ধরলা ও উব্দাখালী নদীর পানি। কুড়িগ্রামে তিস্তা ও ফরিদপুরে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে সহস্রাধিক পরিবার। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা এসব খবর পাঠিয়েছেন-

বরিশাল : নদনদীর পানি বেড়েছে বরিশালে। তিন-চার দিন ধরে জোয়ারের সময় বরিশালের বিভিন্ন নদনদীর পানি অনেক বেড়ে যায়। বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করে। প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে চর ও নিম্নাঞ্চল। ফসলের খেতও তলিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণিমার জো এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যার প্রভাবে নদনদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবশেষ জোয়ারের সময় জেলার হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ পয়েন্টে মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কীর্তনখোলা নদীর পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, বরিশালের বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়েছে। এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরে নামার সময় বরিশালের নদনদীর পানি বিপৎসীমার ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রংপুর : রংপুর বিভাগের নদনদীর পানি ওঠানামা করছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৮ মিটার ও নুন খাওয়া পয়েন্টে ১ দশমিক ২ মিটার নিচ দিয়ে, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কুড়িগ্রাম : দুই সপ্তাহ ধরে চলছে কুড়িগ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙন। কয়েকদিনে তিস্তা এলাকার অর্ধশতাধিক বাড়িঘর, শত বিঘা আবাদি জমি এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও বেশ কিছু স্থাপনা। নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। পাউবো জিও ব্যাগ দিয়ে বজরা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষার চেষ্টা করলেও জিও ব্যাগসহ তা নদীগর্ভে চলে যায়। ভেঙে গেছে আরও ৪৫ থেকে ৫০টি বসতভিটা। সবজি, পাট খেতসহ শত বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দেড় শতাধিক বসতভিটা এখন হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরও ছয় শ থেকে সাত শ পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নদনদীর ৩০টি পয়েন্টে ভাঙছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ায় আমরা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’ নেত্রকোনা : জেলার কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি মঙ্গলবার থেকে কমেছে ২০ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে ওই নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ডাকবাংলো পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটারে নেমে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, দুই দিন বৃষ্টি না হওয়ায় ঢলের পানি দ্রুত নামছে।

ফরিদপুর : ‘আমগো আর শান্তি নাইরে বাজান, চোখটা বুজলে যদি শান্তি পাই। পদ্মায় বেবাক গ্যাছে, অহন বউ, ছাওয়াল-নাতি লইয়া কোন হানে যামু, কিছুই কবার পারি না,’ নদীতে ভেঙে ফেলা ঘরের সামনে বসে এভাবেই মনের কথা বলছিলেন আশি বছরের রশিদ খাঁ। ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের এই ব্যক্তি জানালেন, ঝড়বৃষ্টির দিনে কোথায় যাবেন, কীভাবে থাকবেন তা নিয়েই যত চিন্তা তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী, সোবহান ফকিরের ডাঙ্গীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের সবারই চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। আগ্রাসি পদ্মার তান্ডবে তিন মাসে ১৪৭টি বসতবাড়ি, কয়েক শ একর ফসলি জমি, কয়েক কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক চলে গেছে নদীগর্ভে। স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ছিল পদ্মা নদীর অবস্থান। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থপ্রতিম সাহা জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় প্রাথমিক পর্যায়ে বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর