শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
আখাউড়া স্থলবন্দর

রপ্তানি নেমেছে অর্ধেকে আমদানি তলানিতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি বাণিজ্য কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। আর আমদানি বাণিজ্য ঠেকেছে তলানিতে। ভারতে এ স্থলবন্দর দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে। একই সময়ে ২২৩ কোটি টাকার পণ্য আমদানি কম হয়েছে। বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতে রপ্তানি হতো। এখন রপ্তানি হচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য। তাছাড়া নিজেদের চাহিদামতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে আগ্রহ কমেছে ব্যবসায়ীদের। এসব কারণেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি ও আমদানি এত কমেছে। আমদানি বাণিজ্য তলানিতে নামায় আশানুরূপ রাজস্ব পাচ্ছে না বন্দর এবং শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকার পণ্য। সে হিসেবে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮ টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৮ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে ভালো হওয়ায় অনেক পণ্য এখন নিজ দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। স্থল শুল্ক স্টেশন সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চলত। ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আখাউড়া। মূলত এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয় পণ্য রপ্তানি হয়। বছর পাঁচেক আগেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকায় ছিল হিমায়িত মাছ, পাথর, রড, সিমেন্ট, তুলা, ভোজ্য তেল, এলপি গ্যাস, প্লাস্টিক, শুঁটকি ও বিভিন্ন খাদ্যসামগীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছোট হয়ে এসেছে সে তালিকা। বর্তমানে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট ও প্লাস্টিকসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে। কয়েক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন মাছ রপ্তানি হলেও এখন তা কমে অর্ধেকে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দরের রপ্তানি আয় কমেছে। রপ্তানি পণ্যের অর্ধেকই হিমায়িত মাছ। আর মাছের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুই, পুঁটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও পাবদা। প্রতি কেজি মাছের রপ্তানি মূল্য আড়াই মার্কিন ডলার। প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) গড়ে এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। মূলত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তাজা মাছ পাচারের কারণে রপ্তানি ক্রমেই কমছে, অভিযোগ মাছ রপ্তানিকারকদের। আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আখাউড়া উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত তাজা মাছ পাচার হচ্ছে। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হিমায়িত মাছের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিষয়টি বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এটি বন্ধ না করতে পারলে যে কোনো মুহূর্তে হিমায়িত মাছের রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়বে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে গম, ভুট্টা, পাথর ও পিঁয়াজ। নিজেদের চাহিদামতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। সে জন্যই আমরা সব পণ্য আমদানির জন্য বন্দর খুলে দেওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আমাদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে কিছু পণ্যের তালিকা দিয়ে আমদানির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটির এখনো সুরাহা হয়নি।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বন্দরগুলো থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি অনেকাংশেই আমদানি বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে কম।

সর্বশেষ খবর