শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে আটক ইকরামুল শীর্ষ জঙ্গি ভারতেও

প্রতিদিন ডেস্ক

জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া ইকরামুল হক ওরফে মিলন ভারতেও শীর্ষ জঙ্গি হিসেবে তালিকাভুক্ত আসামি। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, তিনি আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখার দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা। এদিকে ঢাকার পুলিশ সূত্রও জানিয়েছে, ইকরামুল ভারতে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। তার এবং তার স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট ও আধার কার্ডও রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা ওসমান গণি ওরফে আবু ইমরানের ঘনিষ্ঠ- এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ মে ঢাকার মাদারটেক থেকে ইকরামুল হক (৩০) ও তার স্ত্রী ফারিয়া আফরিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর সিটিটিসি জানতে পারে, তিনি ভারতে আল-কায়েদার দাওয়া শাখারপ্রধান। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি হিসেবে তাকে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও খুঁজছিল। তার দুটি সাংগঠনিক ছদ্মনাম রয়েছে আবু তালহা ও মাওলানা সাবেত। সস্ত্রীক গ্রেফতার হওয়া ইকরামুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তবে ইকরামুলের পরিবারের দাবি, ইকরামুল ও তার স্ত্রীকে গত ৩০ এপ্রিল ময়মনসিংহ থেকে তুলে েেনওয়া হয়েছিল। এ সময় তাদের শিশুসন্তানও সঙ্গে ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জানিয়েছে, কয়েক দফায় হেফাজতে এনে তাদের দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ইকরাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতের নির্দেশে এই দম্পতিকে পরে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে শিশুসন্তান ছিল। সন্তান এখন কারাগারে মায়ের সঙ্গে আছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দি, মামলার এজাহার ও তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইকরামুলের গ্রামেরবাড়ি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বোরোরচর গ্রামে। তিনি ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে ২০১৭ সালে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। মাদরাসায় পড়াশোনার সময় আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমির ওসমান গণির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। ইকরামুল ২০১৮ সালে ভারতে দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি আল-কায়েদা  নেটওয়ার্কের (একিউআইএস) সঙ্গে যুক্ত হন এবং এক পর্যায়ে সংগঠনের দাওয়া বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন। সিটিটিসি সূত্র বলছে, ইকরামুল এক পর্যায়ে ভারতীয় পাসপোর্টও জোগাড় করেন। তাতে নাম রয়েছে নূর হোসেন, পিতা সাবু মিয়া ও মা নাবিয়া বিবি। ভারতীয় পাসপোর্টে তার ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটা এলাকা। তার স্ত্রী ফারিয়া আফরিনও ভারতীয় আধার কার্ড করেন। নাম দেন মরিয়ম খাতুন। ইকরামুল একিউআইএসের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বা উপ-প্রধান। তিনি সংগঠনটির দাওয়াতি শাখার প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ভারতে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। মাস সাতেক আগে স্ত্রীকে নিয়ে অবৈধ পথে ইকরামুল বাংলাদেশে ফেরত এসেছিলেন। সূত্র আরও জানিয়েছে, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) গত ২৪ মে একিউআইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গুজরাট থেকে বাংলাদেশি চার তরুণকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন মোহাম্মদ সজীব, মুন্না খালেদ আনসারী, আহারুল ইসলাম ও মমিনুল আনসারী। তারা ইকরামুল হক নামে বাংলাদেশির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছেও এ তথ্য আসে। ঢাকার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ভারতের এটিএস গত বছর থেকে ইকরামুলকে খুঁজছিল। তারা আবু তালহা নামেই খুঁজছিল। পরে জানতে পারে এই ব্যক্তি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। চলতি বছরের মাঝামাঝি তার ব্যাপারে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তথ্য পান। অবশ্য এক মাস আগেই ইকরামুলকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে। যদিও সেটা শুরুতে ওই গোয়েন্দা সূত্র জানতে পারেনি। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইকরামুলের স্ত্রী ফারিয়া আফরিনও জঙ্গি সংগঠনের নারী শাখার সদস্য। আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমির ওসমান গণি ওরফে আবু ইমরান এবং মুখপাত্র তামিম আল আদনানির সঙ্গেও ইকরামুলের যোগাযোগ ছিল। এদিকে ভারতের লালবাজার থানা সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল জঙ্গি ইকরামুল। তিনি কোচবিহার থেকে পালিয়ে প্রথমে কলকাতায় এসে গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও মথুরাপুরে গা-ঢাকা দিয়ে থাকেন। সেখানে হানা দেয় কলকাতা পুলিশ। শেষে পুলিশের তাড়া খেয়ে জঙ্গি ইকরামুল বাংলাদেশে পালিয়ে যান। সূত্র জানায়, কলকাতা এবং বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার, আসাম, দিল্লি, ঝাড়খন্ডসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের এই শীর্ষ নেতা। তার উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে আল-কায়েদার স্লিপার সেল তৈরি হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর