রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু চিকিৎসায় হিমশিম হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গু চিকিৎসায় হিমশিম হাসপাতাল

রাজধানীর হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম কর্তৃপক্ষ -রোহেত রাজীব

শরীরে তীব্র জ্বর সাব্বিরের (৭)। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। হাতে ক্যানোলা পুশ করে স্যালাইন দেওয়া আছে। সাব্বিরের বাবা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চার দিন আগে ছেলের জ্বর এলে ডেঙ্গু টেস্ট করাই, পজিটিভ আসে। এর মধ্যে ছেলে প্রচ- পেটব্যথায় চিৎকার শুরু করলে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। শয্যা না থাকায় মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা চলছে।’  

রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শয্যা অপ্রতুল হয়ে পড়ায় মুগদা হাসপাতালে মেঝেতে বিছানা পেতে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার তুলনায় কয়েক গুণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। গতকাল ভর্তি ছিল ৩৪৭ জন। এরপর বেশি রোগী ভর্তি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ২২৪ জন। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭০ জন, শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে ৩৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৭১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জন, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে ২০ জন ভর্তি আছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৮৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৯০ জন। এর মধ্যে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩১ জন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ৩১ জন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইল শাখায় ৬১ জন, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন এবং আজগর আলী হাসপাতালে ৬৪ জন ভর্তি আছেন।

মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর ডায়রিয়া, অল্প জ্বর বা জ্বর না থাকা, দুই তিন দিন ধরে বমি, মস্তিষ্কে প্রদাহ, বুকে ও পেটে পানি জমে যাওয়া, অসহ্য রকমের পেটব্যথাসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসছে রোগীরা। যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তারা এসব লক্ষণ নিয়ে আসছে। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের একটি বড় অংশ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত এবং এদের জটিলতা বেশি। ভর্তি রোগীর তথ্য দুশ্চিন্তার কারণ ও বিপজ্জনক। আমরা কোনো রোগীকে ফেরত পাঠাচ্ছি না। ডেঙ্গু রোগীর জন্য আমাদের তিনটি ওয়ার্ড আছে। রোগী বাড়লে আরও ওয়ার্ড চালু করা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন, মারা গেছেন দুজন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬০৩ জন ও ঢাকার বাইরের ২১৭ জন। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ১১৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৭৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৪ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬ হাজার ৭৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের ২ হাজার ৭৯৯ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৭ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের আট দিনেই মারা গেছেন ২০ জন। এডিস মশা নির্মূলে গতকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন শুরু হয়েছে। অভিযানে লার্ভা পাওয়ায় ১৭টি মামলায় মোট ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মশক নিধন অভিযানে আমি কোথায় যাব কেউ কিছুই জানেন না। আগে থেকে জানিয়ে গেলে সেখানে সবকিছু পরিষ্কার করা থাকে।’ এ সময় জাপান গার্ডেন সিটির কয়েকটি বহুতল ভবনের বেইজমেন্ট ঘুরে দেখেন তিনি। তিনটি ভবনের বেইজমেন্টে গিয়ে প্রতিটিতেই গাড়ি ধোয়ার পর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার অসংখ্য লার্ভা দেখতে পান মেয়র। জীবন্ত মশাও সেখানে ওড়াউড়ি করছিল। তিনি বলেন, ‘জাপান গার্ডেন সিটি একটি অভিজাত এলাকা। এখানে কর্তৃপক্ষ সার্ভিস চার্জ নেন। তারা ইলেকশন করেন। অথচ এখানে মশার চাষ হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যে পরিমাণ মশা এখানে আছে, জাপান গার্ডেনের নাম চেঞ্জ করে মসকিউটু বা লার্ভা গার্ডেন রাখা দরকার। এখানে ২৩টি ভবনে কয়েক হাজার মানুষ বাস করেন। অথচ প্রতিটি ভবনে যে পরিমাণ লার্ভা, তাতে জাপান গার্ডেন সিটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।’ এডিস মশা নিধনে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। ডিএসসিসির অঞ্চল-৩-এর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চকবাজার এলাকার খাজা দেওয়ান রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আকন্দ মো. ফয়সাল উদ্দীন। অভিযানকালে ২৭টি বাড়ি পরিদর্শন করে দুটিতে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

সর্বশেষ খবর