রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানি বেড়ে ভয়াবহ তিস্তা

বিপৎসীমার ওপরে পূর্ব ও দক্ষিণ

প্রতিদিন ডেস্ক

পানি বেড়ে ভয়াবহ তিস্তা

লালমনিরহাটে তিস্তায় ফের বাড়ছে বন্যার পানি। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুরের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। হবিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি ও বরিশালে কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে পানি কমলেও নদী ভাঙছে ৩০ পয়েন্টে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

লালমনিরহাট : উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে লালমনিরহাটে তিস্তায় আবারও বাড়ছে পানি। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গবাদি পশু নিয়ে বিপদে আছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, বর্ষা মৌসুমে জুন মাসের শুরু থেকে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যে আছে। প্রথম দফা স্বল্প মাত্রার বন্যার পর পানির গতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বাড়তে শুরু করে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্ণা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। সিন্দুর্ণা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজা রহমান বলেন, তিস্তায় গত চার দিন পানি কমছিল। হঠাৎ রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বরিশাল : বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে।

তবে ভোলার দৌলতখান ও তজুমুদ্দিন উপজেলায় মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের পরিসংখ্যন অনুযায়ী, গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলায় সুমরা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই দুই নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় দৌলতখান উপজেলায় বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিষখালী নদীর পানি বরগুনার বেতাগী পয়েন্ট এবং পাথরঘাটা পয়েন্টে বিপৎসীমা স্পর্শ করে প্রবাহিত হয়। পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ও উমেদপুরে কচা নদীর ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বরগুনা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার, বড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার, মীর্জাগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার, বরিশালের হিজলায় ধর্মগঞ্জ নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার, ভোলা খেয়াঘাট পয়েন্টে তেঁতুলিয়া নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার, কাটিপাড়া পয়েন্টে লোহালিয়া নদীর পানি ৪৬ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠি পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার, বাকেরগঞ্জ পয়েন্টে বুড়িশ্বর নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার এবং কীর্তনখোলা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি উপচে চর, নিম্নাঞ্চল এবং লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফসলের খেতেও জোয়ারের পানি ঢুকছে। হবিগঞ্জ : পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, কুশিয়ারা-কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে ১৪৯ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ৫৮৬ সেন্টিমিটার, মাছুলিয়া পয়েন্টে ৩৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসনাইন মাহমুদ জানান, আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুরে নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি ঢুকেছে। পানি প্রবেশ করছে নিচু এলাকায়। ডুবে গেছে কিছু রাস্তা-ঘাটও। রংপুর : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। কুড়িগ্রাম : নদনদীর পানি কমলেও ভাঙন দেখা দিয়েছে জেলার চর ও দ্বীপচরের বিভিন্ন এলাকায়। প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নদী ভাঙছে। রাজারহাট, উলিপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলার কয়েকটি এলাকায় স্থাপনা, বিদ্যালয়, আবাদি জমি ও বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর