রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতায় ৩১ জন নিহত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতায় ৩১ জন নিহত

সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনাবলির মধ্যেই গতকাল পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়েছে। ভোট শুরু হয় সকাল ৭টায়, চলেছে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ১১ জুলাই মঙ্গলবার ভোট গণনা।

মোট ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে দ্বিস্তরীয় ভোট (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি) এবং বাকি জেলাগুলোয় ত্রিস্তরীয় (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) ভোট নেওয়া হয়।

ভোট গ্রহণ শুরুর আগে থেকেই একের পর এক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। সহিংসতায় গোটা রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বারাসাতের কদম্বগাছির পঞ্চায়েতের পীরগাছা এলাকায় গতকাল ভোরে আবদুল্লাহ আলী নামে এক নির্দল সমর্থকের মৃত্যু হয়।

আবদুল্লাহ ছিলেন প্রার্থী তাসলিমা বিবির বুথে এজেন্ট। শুক্রবার রাতে তার ওপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত অবস্থায় বারাসাত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল সকালে তিনি মারা যান। এ খুনের প্রতিবাদে টায়ার জ্বালিয়ে টাকি রোড অবরোধ করেন নির্দল সমর্থকরা।

মুর্শিদাবাদ জেলার খরগ্রামের রতনপুরে এদিন সকালে এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন হন। সদর উদ্দিন শেখ নামের এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগের তীর জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙ্গা ষষ্ঠীতলায় তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। নাম বাবর আলি। ভোটের আগের দিন শুক্রবার রাতে গ্রামে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। তখনই দুষ্কৃতীরা এসে ফুলচাঁদ শেখ ও বাবর আলিকে মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে গভীর রাতে বাবর আলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

খুনের ঘটনা ঘটেছে কোচবিহার জেলায়ও। শুক্রবার রাতে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের অধীন রামপুরে দুই তৃণমূল কর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত গণেশ সরকারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই তার মৃত্যু হয়। আরেকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রাজ্যজুড়ে একের পর এক ভোট সহিংসতার ঘটনায় ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ভোট সম্পর্কিত বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ জানতে ও সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজভবনে (গভর্নর হাউস) পিসরুম চালু করেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ ধরে সন্ত্রাসকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন তিনি।

এ নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ভোট নেওয়া হয়েছে মোট ৭৩ হাজার ৮৮৭ আসনে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩১৭টি গ্রাম সভার আসন ৬৩ হাজার ২২৯টি; ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন ৯ হাজার ৭৩০টি এবং ২২ জেলা পরিষদের আসন ৯২৮টি। মোট ভোটার ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ২৩৪ জন।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর গ্রাম সভা নির্বাচনে এই প্রথম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোট। এরই পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে কড়া চ্যালেঞ্জ দিতে পারেন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রার্থীরা।

২০২৪ সালে ভারতে সংসদ নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর