সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই যুগেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আকতারুজ্জামান

দুই যুগেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ সাত বছর। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে এ সাময়িক অনুমতি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা যাবে। সে হিসেবে আইন অনুযায়ী ১২ বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ আইনের প্রতিফলন কার্যত নেই। অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতির মেয়াদ পার করেছে, এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। বছরের পর বছর তারা আইন অমান্য করে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগ পার করলেও এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চার বছরের ¯œাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতেই শিক্ষার্থীদের বিভাগভেদে পরিশোধ করতে হয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে বন্ধ হবে শিক্ষার্থী ভর্তি, এমন নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু এমন নির্দেশনা থেকে কার্যত ইউটার্ন করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারকির দায়িত্বে থাকা এ সংস্থাটি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোতে বন্ধ হয়নি শিক্ষার্থী ভর্তিও। নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ই পাচ্ছে এমন সময়। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিগগিরই আরও কয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ইউজিসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে সাময়িক অনুমতি লাভ করে। দীর্ঘ ২৬ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও। এ বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির কাছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে বলে জানা গেছে। ২০০১ সালে অনুমোদন লাভ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময়েও স্থানান্তর করতে না পারায় ফের সময় চেয়েছে তারা। একইভাবে পুরোপুরি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি ২০০১ সালে অনুমোদন পাওয়া ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ২০০২ সালে অনুমোদন পাওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২০০৩ সালে অনুমোদন পাওয়া দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকাকে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বলেছে ইউজিসি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। তবে এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুলশান ২ নম্বরের ক্যাম্পাসকেই স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে চায় বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।

গত বছরের এপ্রিলে ইউজিসির দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, ২০২২ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরের জানুয়ারির পর অল্প কিছুদিনের জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ থাকলেও কার্যত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়ে ছাড় দিয়েছে ইউজিসি। ফলে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই চলছে পাঠদান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ সম্প্রতি এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা আর তদারকির কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মের মধ্যে আসছে। আগে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেনি তারাও এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের আইনের মধ্যে পরিচালিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

সর্বশেষ খবর