সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিলেটে তারুণ্যের সমাবেশে ফখরুল

পদত্যাগ না করলে ফয়সালা রাজপথেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

পদত্যাগ না করলে ফয়সালা রাজপথেই

সিলেটে সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে গতকাল তারুণ্যের সমাবেশে আগতরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অবিলম্বে সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক কঠিন সময় ও সংকটের মধ্যে উপনীত হয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব থাকবে কি না তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্ধারণ হবে।’ গতকাল বিকালে সিলেট নগরীর আলিয়া মাদরাসা মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যে সংবিধান আওয়ামী লীগ নিজেরাই কাটছাঁট করে নিজেদের মতো করেছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা নির্বাচন করতে চায়। অথচ বাংলাদেশের জনগণ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে- নির্বাচন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিশেষত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই সম্ভব না। এর প্রমাণ গত দুটি নির্বাচনে পাওয়া গেছে। দেশে এখন কারও ভোটাধিকার নেই। জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোটাধিকারের কথা বললে হামলা, নির্যাতন, গুম, খুন করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহি, বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী খালেদুর রহমান খালেদ, গুম হওয়া ইফতেকার আহমেদ দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের এম এ চৌধুরী শাহান, শিক্ষার্থী আরিফ উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মী প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থী সায়েমা আহমেদ অসীম।

পূর্বনির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই সিলেট শহরে জড়ো হন দলটির নেতা-কর্মীরা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আলিয়া মাদরাসার মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশস্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন টানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় উন্নয়নের কথা বলে। অথচ উন্নয়নের নামে তারা লুটপাট করছে। শতভাগ বিদ্যুতের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। সরকারি গবেষণা সংস্থাই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে করা চুক্তিকে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল বলেছে। গত এক বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে বলে সরকারি সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আদতে গত দুই বছরে বিদ্যুৎ খাতে ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। কেবল বিদ্যুৎ নয়, সব ক্ষেত্রেই লুটপাট চলছে। যে পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন, সেটির জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কেবল রাস্তাঘাট বানাচ্ছে। কিন্তু কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। দেশে লাখ লাখ লোক বেকার। কৃষক ফসলের দাম পায় না। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষ খেতে পারছে না। এই হলো আওয়ামী লীগের উন্নয়ন!

১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এ সমাবেশ থেকে সমগ্র তরুণসমাজ দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তায় নেমে আসবে। ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশ থেকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগে এক দফা কর্মসূচি দেওয়া হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে হটাতে হবে।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছেন। তার আহ্বানে রাজপথে নেমে এসেছে বাংলার তরুণসমাজ। আজ তরুণরা জেগে উঠেছে। তরুণরা জেগে উঠলে কোনো স্বৈরশাসকই ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। এই সরকারও টিকে থাকতে পারবে না। এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং ঘরে না ফেরার শপথবাক্য পাঠ করান যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল সোয়া ৪টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সর্বশেষ খবর