শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

প্রতারণা করাই ছিল বাবা-ছেলের পেশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মো. মাহমুদুল হাসান। অনার্স শেষ করে সরকারি চাকরির চেষ্টা করছিলেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের ভুয়া পরিচয় দেওয়া জাহিদুর রহমান খন্দকার ওরফে জাহিদের সঙ্গে। তিনি তাকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিপিডিবি) সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন।

সরল বিশ্বাসে চাকরির জন্য জাহিদকে ৫০ হাজার টাকা দেন মাহমুদুল। চাকরি না দিয়ে ঘুরাচ্ছিলেন জাহিদ। একপর্যায়ে মাহমুদুল জানতে পারেন জাহিদ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। একই অভিযোগে জাহিদের বাবা মজিবুর রহমান খন্দকার গ্রেফতার হন। ডিবি বলছে, প্রতারণা করাই ছিল বাবা-ছেলের অন্যতম পেশা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহিদ প্রতারণার ক্ষেত্রে একাধিক নাম ব্যবহার করতেন। কখনো জাহিদুর রহমান খন্দকার, কখনো জে. আর. খন্দকার ওরফে জাহিদ এবং কখনো রনি পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ তিনি প্রধানমন্ত্রীর এক এপিএসের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এ ছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, বি.এম. ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান থানা, ঢাকার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পরিচয় দিতেন। শুধু তাই নয়, জাহিদ অস্ট্রেলিয়ার ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভুয়া এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ও-লেভেল পর্যন্ত পড়ালেখা করেন জাহিদ। এক সময় পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তারপর থেকে বিভিন্ন রকম প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি অনেক সময় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। তার বাবা মজিবুর রহমানও বিভিন্ন ছদ্মনামে প্রতারণা করেছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান। তিনি নিজেকে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর বলে পরিচয় দেন। তাছাড়া ব্যবসায়ী, হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার, পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন জাহিদের বাবা মজিবুর। জানা গেছে, দুই মাস আগে জাহিদ প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। বিভিন্ন জায়গায় ওই এপিএসের ছবি ব্যবহার করেন। ট্রু কলারেও ওই কর্মকর্তার নাম লিখে সেভ করেন। প্রথমে জাহিদ তার বাবার সঙ্গে প্রতারণা করেন। তার বাবা মজিবুরকে বিশ্বাস করান প্রধানমন্ত্রীর এক এপিএসের সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তার বাবা মজিবুরকে পরিচয় করিয়ে দিবেন। তারপর একটি ভুয়া নম্বর থেকে সে নিজেই তার বাবার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের পরিচয় দিয়ে পরিচিত হয়। এরপর তার বাবাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দেন। এতে মজিবুর প্ররোচিত হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তাকে দিয়ে তদবিরের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগ, বদলির আশ্বাস এবং পদোন্নতির লোভ দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। পরে তাদের কাছ থেকে তদবিরের টাকা দাবি করতেন। যারা রাজি হতেন তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক থেকে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি, পুলিশ ইন্সপেক্টরকে থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে চাকরির ফাইল তৈরি করেন। সম্প্রতি জাহিদের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করে ডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে জাহিদ ও তার বাবা মজিবুরকে গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত সিমসহ চারটি মোবাইল ফোন, প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়পত্র, মাদক গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ও ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান, গ্রেফতার জাহিদ প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের ছদ্মবেশ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পদোন্নতি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। জাহিদের এই কাজে সহযোগিতা করার অপরাধে তার বাবা মজিবুরকেও গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সহায়তা নিতে অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর