শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৌসুম শুরু হলেও মিলছে না ইলিশ

রাহাত খান, বরিশাল

মৌসুম শুরু হলেও মিলছে না ইলিশ

জাটকা শিকারে আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে মৌসুম শুরু হলেও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। এদিকে সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় সাগর থেকেও ইলিশ আহরণ বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে নদীর পানি কমবে এবং তখন প্রত্যাশিত ইলিশ মিলবে বলে ধারণা করছেন মৎস্যজীবীরা। অপরদিকে আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে সাগর থেকেও প্রচুর ইলিশ আহরিত হবে বলে আশা মৎস্য বিভাগের। জাটকা (ছোট ইলিশ) নির্বিঘ্নে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে সরকার পয়লা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস নদ-নদীতে জাটকা শিকার নিষিদ্ধ করে। বিগত বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে অভ্যন্তরীণ নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। এবার মৌসুম শুরুর সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। তীব্র স্রোতে জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও সেটি টেনে তুলে পাচ্ছেন না ইলিশ। কেউ কেউ দুই-চারটা ইলিশ পেলেও প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না তাদের।

গতকাল পোর্ট রোডে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি আড়তের সামনে বিভিন্ন আকারের কিছু ইলিশের লট ব্যাপারীরা প্রকাশ্য নিলামে কিনছেন। নিলামে কেনা ইলিশের একাংশ বিক্রি হচ্ছে পোর্ট রোডসহ বিভিন্ন বাজারে। আর বড় আকারের ইলিশ ব্যাপারীদের হাত ধরে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে।

পোর্ট রোডের খুচরা মাছ বিক্রেতা মো. হারুন জানান, পোর্ট রোডের পাইকারি বাজারে দেড় কেজি আকারের ইলিশ কেজি প্রতি ২ হাজার ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১ কেজি ২০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, এক কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২ হাজার ২৫০ টাকা,  রপ্তানিযোগ্য এলসি সাইজের (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৭৫ টাকায় এবং ভেলকা সাইজের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) প্রতি কেজি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। পাইকারি বাজার থেকে উচ্চমূল্যে ইলিশ কিনে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাভে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। 

গত শনিবার প্রায় ১০০ মণ ইলিশ এসেছিল পোর্ট রোড মোকামে। গতকাল এসেছে সর্বোচ্চ ৮০ মণ ইলিশ। সরবরাহ কম থাকায় আগের দিনের চেয়ে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

পোর্ট রোডের মাছ বিক্রেতা হালিম শিকদার জানান, ইলিশের খুচরা দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দাম শুনে আঁতকে ওঠেন অনেকে। পরে অন্য মাছ কিনে নেন ক্রেতারা। পোর্ট রোডের আড়তদার মো. নাসির উদ্দিন জানান, ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও আড়তে ইলিশ নেই। মৌসুমের সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর শনিবার চলতি মৌসুমে সর্বাধিক প্রায় ১০০ মণ ইলিশ এসেছিল পোর্ট রোড মোকামে। এর আগের দিন এসেছিল সর্বাধিক ৬০ মন ইলিশ। গতকাল এসেছে প্রায় ৮০ মণ ইলিশ। তার মতে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। নদীতে পানি থইথই করছে। জেলেরা ঠিকমতো নদীতে জাল ফেলতে পারছেন না। এ কারণে ইলিশ আহরণ কম হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনে নদীর পানি কমলে নদীতে ইলিশ আহরণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি নদীতে পানি কমলে তখন অভ্যন্তরীণ নদীতে ইলিশ আহরণ বাড়বে। ২৩ জুলাই সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সাগর থেকেও প্রচুর ইলিশ আহরিত হবে। তখন দামও সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে বলে ধারণা করছে মৎস্য বিভাগ।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ ভাগ। গত বছর দেশে প্রায় ৫ লাখ ৬৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। যার ৬৬ ভাগ উৎপাদিত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে।

সর্বশেষ খবর