মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জামায়াত নিয়ে দুশ্চিন্তা বিএনপির আওয়ামী লীগে প্রার্থী এক ডজন

সাইফুল ইসলাম, যশোর

জামায়াত নিয়ে দুশ্চিন্তা বিএনপির আওয়ামী লীগে প্রার্থী এক ডজন

যশোর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। দলের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা ছোট হলেও প্রতিবারের মতো এবারও জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েই দুশ্চিন্তা তাদের। যদিও জামায়াতের এবার নিজেদের দলীয় প্রতীকে ভোট করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি বিএনপি জোটগতভাবে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় এবং জামায়াতপ্রার্থী বিএনপির প্রতীকে ভোট করে, সেক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বলে দলের অনেকেই মনে করছেন।

ভারত সীমান্তবর্তী ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা নিয়ে যশোর-২ আসন। এ দুই উপজেলায় ১১টি করে মোট ২২টি ইউনিয়ন রয়েছে। আছে দুটি পৌরসভা। গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ ছয়বার, বিএনপি ও জামায়াত দুবার করে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন।

যশোর-২ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, ২০১৪ সালে একই দলের মনিরুল ইসলাম এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন নির্বাচিত হন।

এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেতে প্রায় এক ডজন নেতা জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন এবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং এ আসন থেকে দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলামও এবার দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তাঁর ছেলে মোস্তফা আশীষ ইসলামও মনোনয়ন পেতে দুই উপজেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলামও এলাকায় গণসংযোগে আছেন সকাল-সন্ধ্যা। নৌকার মনোনয়ন পেতে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ বি এম আহসানুল হক। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তৃণমূলে তাঁর রয়েছে শক্ত অবস্থান। এ ছাড়া আরেক সহসভাপতি আলী রায়হান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুণ-অর রশিদ, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন ও গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে এ দুই উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান। মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঝিকরগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মুনিরুল হুদা, বিএনপি নেতা যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোর্তজা এলাহী টিপু।

সর্বশেষ চারটি নির্বাচনের তিনটিতেই (২০১৪-এর নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি) বিএনপি এ আসনটি জোট শরিক জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছিল। বিএনপি নেতারা আশায় বুক বাঁধছেন এবার তারা মনোনয়ন পাবেন। এ আসন থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক অন্যান্য দলের নেতাদের এখনো গণসংযোগে দেখা যায়নি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতা চোখে পড়ছে বেশি। বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন আবারও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, গতবার মনোনয়ন না পেলেও এক দিনের জন্যও আমি এলাকা ছাড়িনি। এবার জোরেশোরে নির্বাচনী তৎপরতায় রয়েছেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলায় গণসংযোগের পাশাপাশি এক যুগ ধরে তিনি দুই উপজেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে আছেন। অত্যাচার, নির্যাতনে আহত, নিহত দলীয় নেতা-কর্মী ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, জেলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের জামিনসহ সব বিষয়ে দেখভাল করে আসছেন। এ আসনে জামায়াতের কিছু রিজার্ভ ভোট থাকায় এখান থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হতেন জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হুসাইন। তিনি ইন্তেকাল করেছেন। যদিও জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে উপজেলা আমির আরশাদুল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ নন এবং তার তেমন কোনো নির্বাচনী তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। বিগত নির্বাচনগুলোয় এ আসনে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী দিলেও এবার এখনো তাদের কোনো তৎপরতা এলাকার মানুষের চোখে পড়েনি।

 

 

সর্বশেষ খবর