মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজস্ব আদায়ে চার বাধা দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়

♦ উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, করের আওতা বাড়াতে সমন্বয়হীনতা ♦ তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা, দক্ষ জনবলের অভাব অবকাঠামো সংকট

রুহুল আমিন রাসেল

রাজস্ব আদায়ে চার বাধা দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়

প্রতি অর্থবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বেঁধে দেওয়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চার বাধা দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা আইআরডি। আইআরডি বলছে, প্রতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরকে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। করের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। আন্তকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা বিদ্যমান। দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে এনবিআর। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় যে চারটি বাধা চিহ্নিত করেছে, ব্যবসায়ীরা সেই বিষয়গুলো দীর্ঘদিন বলে আসছেন। কিন্তু এনবিআর কারও কথা শোনে না। ব্যবসায়ীদের মতামতকে তোয়াক্কা করছে না এনবিআর। এনবিআরের একটা চিন্তার পরিবর্তন দরকার। রাজস্ব আদায়ব্যবস্থা আধুনিকায়নে এনবিআরের আগ্রহ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। প্রসঙ্গত, সদ্য শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে ভ্যাট থেকে। এনবিআর সূত্র বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর অব্যাহতির কারণে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এমন কর অব্যাহতির কারণে অর্জিত হচ্ছে না রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই কর রেয়াতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে কর অব্যাহতির পরিমাণ বেড়েছে ৫২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৪২ শতাংশ। কর অব্যাহতিকে আক্ষরিক অর্থে বলা হয় ‘প্রত্যক্ষ কর ব্যয়’ বা ডিরেক্ট ট্যাক্স এক্সপেনডিচার। সূত্র বলছে, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে রাজস্ব আদায়ে ওই চার বাধা চিহ্নিত করেছে আইআরডি। চার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ’ (আইআরডি)। বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত তিন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি। উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও চলতি অর্থবছর ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার একটি বড় সাইজের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আইআরডির আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইআরডির তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মূল ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কাটছাঁট করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা (এনবিআর ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ১২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা)। অর্থ বিভাগের হিসাবে, এর বিপরীতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। আইআরডির হিসাবে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৫৮।

সর্বশেষ খবর