বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলুর দামেও রাজনীতি

উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫১ পয়সা, বিক্রি ৪০ টাকায় ♦ চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি ২১ লাখ মেট্রিক টন ♦ অপকৌশলে অসাধু ব্যবসায়ীরা, প্রতিবেদন কৃষি বিপণন অধিদফতরের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আলুর দামেও রাজনীতি

গত মৌসুমে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। দেশে মোট চাহিদা প্রায় ৮৯ দশমিক ৯২ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় ২১ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়ার পরও ১৫ দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ সবজিটির দাম বাড়ছে। ১০ জুলাই পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এটি গত এক মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং এক বছরের তুলনায় প্রায় ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

আলুর এ দাম বাড়ার পেছনে ‘রাজনীতি’ দেখছে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদফতর। সংস্থাটি বলছে, ‘একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে কৃত্রিমভাবে অপকৌশল অবলম্বন করে আলুর বাজারমূল্য বৃদ্ধি করছেন।’

বাংলাদেশে আলুর সাপ্লাই চেন ও মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ক এক প্রতিবেদনে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ১০ জুলাই এ প্রতিবেদনটি অধিদফতর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেদনে মূল্যবৃদ্ধির কারণের পাশাপাশি মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। সুপারিশে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকৌশল ছাড়াও দাম বাড়ার জন্য হিমাগার থেকে চাহিদামাফিক আলু খালাস না হওয়া; সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিবহন সমস্যা এবং ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী পরিবহনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার নিশ্চিত না করার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কৃষি বিপণন অধিদফতরে কর্মরত জনবলের কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর দাবি, অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লিখিত উৎপাদন ও মজুদের তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবার প্রায় ২০ শতাংশ আলু উৎপাদন কম হয়েছে। এ তথ্য ব্যবসায়ীদের জানা। দাম বাড়ার আশায় তাই হিমাগার থেকে আলু কম খালাস করছেন ব্যবসায়ীরা। সে কারণেই দাম বাড়ছে।

হিমাগার ভর্তি আলু খালাস হচ্ছে না : প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর হিমাগারে মোট ২৪ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে ২২ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। কৃষক পর্যায়ে ঘরে কোনো আলু সংরক্ষণে নেই। জুন পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ২৮ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন। কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, হিমাগারগুলোয় সংরক্ষণের প্রায় ৮৯ শতাংশ আলু এখনো মজুদ আছে। হিমাগার মালিকরা আরও দাম বাড়ার আশায় আলু ছাড়ছেন না।

উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫১ পয়সা : কৃষি বিপণন অধিদফতর হিসাব করে দেখেছে, বর্তমানে বাজারে যে আলু পাওয়া যাচ্ছে এর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১০ টাকা ৫১ পয়সা। এটি ব্যাপারী, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে প্রায় চার গুণ বেশি দামে ভোক্তার কাছে পৌঁছে। অধিদফতরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে সরবরাহ খরচ ও মুনাফা যোগ করে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর বিক্রয়মূল্য ১৪ টাকা ৯৩ পয়সা, ফড়িয়া বা ব্যাপারী পর্যায়ে ১৬ টাকা ৯০ পয়সা, পাইকার বা আড়তদার পর্যায়ে ২৩ টাকা ৬৬ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ খরচ ও মুনাফা যোগ করে সর্বোচ্চ ৩২ টাকা ৭ পয়সা দাম হতে পারে। অথচ বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। কেজিতে আলুর দাম বেশি নিচ্ছে ৮ থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত। এখানে অসাধু ব্যবসায়ীরা অপকৌশল করছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেও এ অপকৌশল করা হতে পারে।’

মনিটরিং বাড়াতে চিঠি : আলুর দাম স্থিতিশীল রাখতে মাঠ পর্যায়ে কঠোর মনিটরিংয়ের বার্তা দিয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতরের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১০ জুলাই পাঠানো ওই চিঠিতে অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম উল্লেখ করেন, উৎপাদন ও মজুদ বেশি থাকার পরও লক্ষ করা যাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে অপকৌশল করে আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর