বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডিবি পরিচয়ে এক যুগ ধরে ডাকাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিবির সোর্স হিসেবে একসময় কাজ করতেন শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি। ২০১২ সালে নিজেই গড়ে তোলেন ডাকাত দল। তারপর প্রায় এক যুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছেন। সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চক্রের ১৬ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গ্রেফতার সাতজন শহিদ মাঝির দলের এবং অন্য একটি ডাকাত দলের নয়জন। দুই দলই একে অন্যের পরিচিত। ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় শহিদ মাঝিকে গ্রেফতার করা হলেও তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. খলিলুর রহমান ওরফে মাগার, মো. আকরাম হোসেন, মো. দ্বীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহম্মেদ, মো. ইলিয়াছ আহম্মেদ ওরফে নিরব, মো. ফরহাদ আলী, মো. রিয়াজ হোসেন হাওলাদার ওরফে রিয়াজুল, মো. শফিকুল ইসলাম লিটন, মো. সেরাজুল ইসলাম ও মো. জহিরুল ইসলাম পিন্টু। তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও বিভিন্ন দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ১৭ জুন মামলার বাদী আবদুল আজিজ তার ভগ্নিপতির বন্ধুর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। সেদিন বিকালে পল্টন এলাকার বায়তুল ভিউ মার্কেটের পাশ থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে খিলক্ষেতের বাসার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ক্যান্টনমেন্টের জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার ব্যক্তি মাইক্রোবাসে করে এসে তার গতি রোধ করেন।

তারা ডিবির পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে হাত, পা ও চোখ বেঁধে মারধর করেন। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে দুর্বৃত্তরা ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর বিকাশে এজেন্ট নম্বর পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে ওই রাতেই ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়ায় রাস্তার পাশে ফেলে যায়। এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে ডিবির গুলশান বিভাগ। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মামলার বাদীর বক্তব্য পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলটিকে শনাক্ত করে। ১০ জুলাই গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক থেকে চক্রের মূল হোতা শহিদ মাঝিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার ডেমরা থানার পাড়াডগাইর ফার্মের মোড় এলাকা থেকে ডিবি লেখা কালো রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাস থেকে সাগর, শাহ আলম, কামরুল ও শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, পাড়াডগাইরের একটি বাসা থেকে হাসান ও নুরুলকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে ধারাবাহিক অভিযানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানার ৩০০ ফিট রোডে অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরও নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পারস্পরিক যোগসাজশে মাইক্রোবাসযোগে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক এলাকায় বিশেষ করে মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান থেকে কোনো ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় টার্গেট করে। পরে তারা দু-তিন জন মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু নেয়। পথে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের অন্য টিম প্রস্তুত থাকে। সুবিধাজনক স্থানে গেলেই অপহরণ করে।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, শহিদ মাঝি একসময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালে শহিদ মাঝি অন্যদের বুঝিয়ে ডাকাত দল তৈরি করেন। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছেন। আমরা সাতজনকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, তাদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এস এম রেজাউল হক। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলায় শহিদ মাঝিসহ তার দলের সাতজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতার ৯ ডাকাতের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল গ্রেফতার ১৬ জনকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত শহিদ মাঝিসহ তার দলের সাতজনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির আরও অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর