বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিভিল সার্জন অফিসের কোটিপতি স্টোরকিপার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের স্টোরকিপারের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি তার কাছে থাকা সম্পদের তথ্য চাইলে তিনি প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সম্পদের কোনো হিসাব দিতে পারেননি। ওই স্টোরকিপারের নাম এ কে এম ফজলুল হক। জানা গেছে, বর্তমানে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন।

গতকাল খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ কে এম ফজলুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলায় তার স্ত্রী খায়রুন নেছাকেও আসামি করা হয়েছে। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ২২ জুন অনুমোদন দেন দুদকের উপপরিচালক দেবব্রত মন্ডল। দুদক বলছে, এ কে এম ফজলুল হক ১ কোটি ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৭ টাকার সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন। খায়রুন নেছা স্বামীর অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ নিজ নামে নিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২৩ মে ফজলুল হকের কাছে সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেন, তার নিজের নামে এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকার স্থাবর এবং ৪১ লাখ ৬১ হাজার ৩০৬ টাকার অস্থাবর- মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৩০৬ টাকার সম্পদ রয়েছে। অথচ তার নিজ নামে এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৪ টাকার স্থাবর ও ৪১ লাখ ৬১ হাজার ৩০৬ টাকার অস্থাবর- মোট ১ কোটি ৯৭ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে ৫১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। সাতক্ষীরায় স্ত্রীর নামে থাকা চার তলা বাড়িটির মূল্য দেখিয়েছিলেন তিনি ৬৩ লাখ টাকা। কিন্তু তার মূল্য ছিল ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ১৫৪ টাকা। ফজলুল হকের নামে সাতক্ষীরা সদরে সেমিপাকা তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ি আছে। তিনি এর মূল্য দেখিয়েছিলেন ১২ লাখ টাকা। অথচ তার মূল্য ছিল ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬০ টাকা। এ ছাড়া তিনি নিজ নামে এবং পুত্র ও কন্যার নামে কেনা ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭০ টাকার সম্পদের তথ্যও গোপন করেন। দুদকের করা মামলার তথ্যানুযায়ী, ফজলুল হক ও তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে ১ কোটি ৯৭ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। আর ফজলুল হকের ২ লাখ টাকা ব্যক্তিগত লোন রয়েছে। অর্থাৎ তার ১ কোটি ৯৫ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া যায়। এর বিপরীতে ফজলুল হকের গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৩ টাকা। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক খাতে ৯ লাখ ৬০০ টাকা ব্যয় করেন। ফলে তার নিট আয় কিংবা সঞ্চয় ২৭ লাখ ২৪ হাজার ১৩৩ টাকা। তিনি সরকারি চাকরিকালে পদপদবি ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও তার ওপর নির্ভরশীলদের নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেন। এ ছাড়া ফজলুল হকের স্ত্রী খায়রুন নেছা একজন গৃহিণী। অথচ তিনি নিজেকে একজন মাছ চাষি ও পশুখাদ্যের ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করলেও এর সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে পারেননি। ফলে প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তার নামে থাকা সম্পদ স্বামীর দুর্নীতির অর্থ দ্বারা অর্জিত। জানা যায়, এ কে এম ফজলুল হককে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আটক করে দুদক। এরপর ওই বছর ২৮ অক্টোবর তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর