রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্দি মানুষ, বিশুদ্ধ পানির সংকট

বন্যা পরিস্থিতি

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্দি মানুষ, বিশুদ্ধ পানির সংকট

লালমনিরহাটে বাড়িঘরে উঠেছে পানি। যাতায়াতে নৌকাই ভরসা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের উত্তরের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিস্ত, দুধকুমার, ধরলা ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, নেত্রকোনা ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে গতকাল এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো।) কুড়িগ্রামে ৮০ হাজার মানুষ ও লালমনিরহাটে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গাইবান্ধায় তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে ২৮ সেন্টিমিটার ও বগুড়ায় ৩২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ভোলার তজুমদ্দিনে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীভাঙন শুরু হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়ার তিন উপজেলা ও দিনাজপুরে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা এসব খবর পাঠিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম : উজান থেকে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হুহু করে বাড়ছে। দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে গতকাল বিকাল ৩টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়। দুধকুমার নদের অববাহিকায় সড়ক ও ব্রিজ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৫টি গ্রাম। এ ছাড়া সদরের তিন ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার দুই ইউনিয়ন, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ ৪-৫ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘরে পানি ওঠায় তারা রান্নাবান্না করতে পারছে না। দেখা দিয়েছে তীব্র জ¦ালানি ও গোখাদ্য সংকট। কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ১৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১ হাজার ৬৬০টি।

লালমনিরহাট : তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৫ উপজেলায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সব নদনদীর পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, পারদিয়া ও কুন্দেরপাড়া গ্রাম, মোল্লারচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ২০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ২৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বাড়ছে করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল। জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীভাঙন শুরু হয়েছে বগুড়ার তিন উপজেলায়। সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ১৫ দিনে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১০০টির বেশি পরিবার এলাকাছাড়া হয়েছে। বরিশাল : বরিশাল বিভাগের ভোলার তজুমদ্দিন পয়েন্টে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ থেকে প্রবাহিত হচ্ছে।

দিনাজপুর : দিনাজপুরে আত্রাই নদীর ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। দিনাজপুরের খানসামার ভাবকি ইউপির চাকিনীয়া, খামারপাড়া ইউনিয়নের মালিজালের ঘাট ও জোয়ার গ্রামের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে নদীতে ভিটেমাটি বিলীন আতঙ্কে রয়েছে আত্রাই নদী পাড়ের মানুষ। নদীভাঙনে ২৫০ একর আবাদি কৃষিজমি বিলীন হয়েছে।

রংপুর : পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর