রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - মো. আফজাল করিম, সিইও অ্যান্ড এমডি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সোনালী ব্যাংক মুখ্য ভূমিকা রাখতে চায়

আলী রিয়াজ

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সোনালী ব্যাংক মুখ্য ভূমিকা রাখতে চায়

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড এমডি মো. আফজাল করিম বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্মার্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সোনালী ব্যাংক অনেক দূর এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক। ক্যাশলেস লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়েছে। প্রতিনিয়ত ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য এবং আরও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে করোনার সময় থেকে সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর আরও নানা সেবা যুক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেনসহ কল সেন্টারের মতো                 সর্বাধুনিক সেবা আমরা চালু করেছি।’

২০২২ সালের ২৮ আগস্ট ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে মো. আফজাল করিম দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি প্রযুক্তিনির্ভর সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধিসহ ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসা সম্প্রসারণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হ্রাস, ঋণ ও আমানত বৃদ্ধি, আমানত-ঋণ অনুপাত বৃদ্ধি, লোকসানি শাখা কমিয়ে আনা, বিভিন্ন নতুন ঋণ ও আমানত স্কিম চালু, ব্যাংকের সার্বিক সূচকগুলোর মান উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। এ ছাড়া গ্রাহকের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু ও পরিধি বৃদ্ধি করেছেন তিনি। এর মধ্যে সোনালী পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মানুষ সহজেই সব ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। এটিএম বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আফজাল করিম ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে স্মার্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক এসব সেবা চালু করে। ১৫ মার্চ সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার সেবা চালু করে সোনালী ব্যাংক। কল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহক ও নাগরিকরা ব্যাংকের বিভিন্ন সেবা, কার্ড, আমানত ও ঋণের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো জিজ্ঞাসা ও সমস্যা বিষয়ে তথ্য ও সেবা পাচ্ছেন। সম্প্রতি জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি বলেন, সোনালী ব্যাংকের রয়েছে দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিগত ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি। ফলে মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকটির ১ হাজার ২২৯টি শাখাই অনলাইন ব্যাংকের আওতায়। তিনি বলেন, করোনাকাল থেকে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় জোর দিয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। সে সময় ঘরে বসেই মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের তুলনায় সোনালী ব্যাংক অনেক এগিয়ে ছিল। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করা হয়। অ্যাপটি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৭টি হিসাব খোলা হয়েছে। একই বছরের ১৭ মার্চ চালু করা হয় সোনালী ই-ওয়ালেট সেবা। চলতি মাস পর্যন্ত যার হিসাবসংখ্যা ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩১২টি। এই অ্যাপস দুটি চালুর ফলে হিসাব খোলা, টাকা ট্রান্সফার, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল প্রদান, পাসপোর্ট ও ট্যাক্সের টাকা প্রদানসহ বিভিন্ন কাজে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হয় না। ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ৭৬৫টি লেনদেন হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রাহকরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের লেনদেন, কেনাকাটা, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতে পারছেন। সোনালী ব্যাংকের ব্লেজ নামীয় সার্ভিসের মাধ্যমে প্রবাসী গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ মাত্র ৫ সেকেন্ডে নিজ হিসাবে জমা করতে পারছেন। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয় দেশে আনতে ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক প্রথম চালু করে পেপাল ইনওয়ার্ড সার্ভিস। এর মাধ্যমে মাত্র ১ সেকেন্ড সময়ে দেশে টাকা আনা যায়। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, আপামর জনসাধারণের ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও চালু করেছে সোনালী ব্যাংক। এখান থেকে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, আমানত রাখা, ঋণসুবিধা, বিভিন্ন বিল জমা, রেমিট্যান্সসহ সব ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হয়। চলতি বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেকর্ড ১ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, যা গত বছরের একই সময়ের পরিচালন মুনাফার চেয়ে ৬৩৪ কোটি টাকা বেশি। গত বছর এই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে সোনালী ই-সেবা মোবাইল অ্যাপের আইওএস ভার্সনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে হিসাব খোলা, ই-ওয়ালেট মোবাইল অ্যাপের আইওএস ও অ্যান্ড্রুুয়েড ভার্সনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে লেনদেন এবং কিউআর কোডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন, ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার (নম্বর ১৬৬৩৯) সেবা চালু করা হয়েছে। এর সুফল হিসেবে নানা সূচকে সোনালী ব্যাংক এগিয়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর