রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
দুই বিদেশিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

চক্রটি ১৩ অ্যাকাউন্টে হাতিয়ে নেয় ৫ কোটি টাকা

সাখাওয়াত কাওসার

একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে ১৩টি অ্যাকাউন্টে হাতিয়ে নেয় ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর আগে ওই চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গড়ে তোলে বন্ধুত্ব। গত কয়েক বছরে দেশি-বিদেশি এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা থানায় করা মামলা তদন্ত করে এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম) রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে চক্রের সদস্যদের আসামি করে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই নাইজেরিয়ানসহ ১৩ জনকে আসামি করে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান। আসামিদের একজন বিপ্লব লস্করের ৩ কোটি টাকা দামের একটি তিনতলা বাড়ি আদালতের নির্দেশে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে সিআইডি। সিআইডি জানায়, চার্জশিটে আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১২  সালের মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় অভিযোগ করা হয়। মামলায় আটজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আদালত মামলাটির চার্জশিট আমলে নেয় ৫ জুন। আদালত চার্জশিট অনুযায়ী পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, কায়েস হোসেন, শরিফুল ইসলাম, আরমান হোসেন, বিপ্লব লস্কর, এস এম রবিউল ইসলাম ওরফে মান্না, লতা আক্তার, আয়শা আক্তার, হাবিবুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, আল আমিন ও মিজান লস্কর এবং দুই নাইজেরিয়ান জন জোসেফ ওরফে আসুজু ইম্মা দিলচুয়ু ও ইমেকা ইউরিক। এর মধ্যে কায়েস হোসেন কারাগারে। শরিফুল ইসলাম, আরমান হোসেন ও মিজান লস্কর পলাতক রয়েছেন। বাকিরা হাই কোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদুল আজহার আগে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালত তা আমলে নিয়েছেন। তদন্তে সিআইডি জানতে পেরেছে, বিভিন্ন ব্যক্তিকে মূল্যবান উপহারসামগ্রী ও বিদেশি মুদ্রা পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। চক্রের সদস্যদের কেউ বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোনে ভুক্তভোগীদের বন্ধুর পাঠানো মূল্যবান সামগ্রীর জন্য কাস্টমস ডিউটি ও বিদেশি মুদ্রার জন্য ‘এন্টি মানি লন্ডারিং সার্টিফিকেট’ বাবদ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বলতেন। ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো ছিল এ চক্রের সদস্যদের। এর মাধ্যমে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, প্রতারক চক্রের সদস্য কায়েস হোসেন ভিন্ন চারটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। শরিফুল ইসলাম ভিন্ন আটটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আরমান হোসেন ফেসবুক প্রতারণার মাধ্যমে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে চক্রটি ১৩টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। তদন্তে দেখা গেছে, আসামিরা তাদের যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেখিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস নেই। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি কায়েস হোসেন ও বিপ্লব লস্কর। জবানবন্দিতে বিপ্লব লস্কর বলেছেন, তিনি ২০১৬ সাল থেকে দেশি-বিদেশি চক্রের সদস্য হয়ে কাজ করেন। তিনি ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে ‘ডোর টু ডোর’ বিজনেস শুরু করেন। প্রতারণায় পাওয়া টাকা থেকে কমিশন রেখে বাকিটা সদস্যদের দিয়ে দিতেন তিনি। বিদেশিদের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নসহ নানা মাধ্যমে অর্থের লেনদেন হতো তার। জবানবন্দিতে কায়েস হোসেন বলেছেন, বিভিন্ন ব্যাংকে তার ১৮টি হিসাব রয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থ থেকে প্রতি লাখে তিনি ৩ হাজার টাকা করে পেতেন তিনি। মামলার বাদী সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম) রাশেদুর রহমান বলেন, চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

সিআইডির জিম্মায় বিপ্লবের ৩ কোটি টাকার বাড়ি : বিপ্লব ঢাকার পূর্বাচলের কাছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইছাপুরা টেকনোয়াদ্ধায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তিনি দেড় বছর আগে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকায় এই জমি কিনেছিলেন এক চিকিৎসকের কাছ থেকে। সেখানে তিনতলা অভিজাত বাড়ি তৈরি করতে খরচ করেছেন প্রায় ৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কোর্টের নির্দেশে বিপ্লবের বাড়িটি ক্রোক করে সিআইডি।

সর্বশেষ খবর