রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, বেকায়দায় বিএনপি

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ, বেকায়দায় বিএনপি

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৩ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনের বর্তমান এমপি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজামকে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হন।

দুই উপজেলায় উন্নয়নের মাধ্যমে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। অপরদিকে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রার্থীর ছড়াছড়ির কারণে অনেকটা বেকায়দায় দলটি।

আগামী নির্বাচনে তিনবারের এমপি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এটা অনেকটা নিশ্চিত। বিগত সময়ে তিনি আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। একইভাবে দুই উপজেলায় সমানভাবে উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে কর্ণফুলীকে আলাদা উপজেলা করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন তার পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী। জাবেদের স্বচ্ছ ভাবূর্তি ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির কারণে পুরো চট্টগ্রামে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে চিন্তামুক্ত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অতীতে আর কোনো সময়ে হয়নি। আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে এত উন্নয়ন হয়েছে তা অকল্পনীয়। শিল্প কারখানা হয়েছে, সড়ক ব্যবস্থার উন্নত হয়েছে, কর্মসংস্থান হয়েছে। জনগণ আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে আবারও দেশের শাসনভার তুলে দেবে।

অপরদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় থাকা বিএনপিতে রয়েছে প্রার্থীজট। বিএনপির সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজামের এক সময় এলাকায় একক আধিপত্য থাকলেও এখন আর নেই। দলে এখন কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত, নেই সাংগঠনিক অবস্থানও। আগামী নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী আছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায়। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আবারও মনোনয়ন চাইবেন সরওয়ার জামাল নিজাম এবং গত নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

বিএনপির সাবেক এমপি সরোয়ার জামাল নিজাম বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এবং বিএনপি অংশ নিলে আমি আবারও দলের মনোনয়ন চাইব। আশা করি দলীয় মনোনয়ন পেলে হারানো এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনে অংশ নিলে আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেবে এবং দলের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করব। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে, আনোয়ারা উপজেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রব চৌধুরী টিপু, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিয়া চৌধুরী, কর্ণফুলী উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এম বোরহান উদ্দিন ফারুকী, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক মো. হারুনুর রশীদ। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন মনোনয়ন চাইবেন। কর্ণফুলী ট্যানেলের সংযোগসহ দেশি-বিদেশি ভারী শিল্পের কারখানার অবস্থান এ আসনে। জাতীয় নির্বাচনে এ আসনটি ছয়বার বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বিজয়ী হয় চারবার। আনোয়ারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান থাকলেও এক সময় কর্ণফুলীতে শক্ত অবস্থান ছিল বিএনপির। বর্তমানে সে অবস্থান বিএনপির না থাকলেও আওয়ামী লীগের শঙ্কা ওই এলাকার বিএনপির ভোট নিয়ে। যদিও ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের এমপি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাত ধরে কর্ণফুলীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, তা অতীতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোনো সরকারের আমলে হয়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আনোয়ারার চেয়ে আগামী নির্বাচনে কর্ণফুলীতে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এ আসনেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল, কাফকো ও কেইপিজেড। গড়ে উঠছে চীনা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল। আনোয়ারার পারকী সমুদ্রসৈকতে গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। একে ঘিরে শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

 

সর্বশেষ খবর