দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, জুয়েলারি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি করে তৈরি পোশাকের চার গুণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, যারা স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেন তারা সবাই রপ্তানির মাধ্যমে শিল্পপতি হতে পারেন। আপনারা রপ্তানির জন্য জুয়েলারি কারখানা করেন, আমি জায়গা দেব। রাজধানীর কেরানীগঞ্জে জুয়েলারি মালিকদের কারখানা করার জন্য ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। বাজুসকে আমি এটা উপহার হিসেবে দিতে চাই। সেখান থেকে আপনারা সারা বিশ্বে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি শুরু করেন। তিনি বলেন, এ জুয়েলারি শিল্পের যে সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রী ক্ষণে ক্ষণে সচিবালয়ে স্বর্ণ রিফাইনারির খবর নেন। স্বর্ণ রিফাইনারিতেই আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাজুসের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, এখন এক কন্টেইনার তৈরি পোশাক রপ্তানি করলে আয় হয় ২০ হাজার ডলার। আর এক কন্টেইনার স্বর্ণালংকার রপ্তানি করলে আসবে ২০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের স্বর্ণকারিগরদের বিশ্বজোড়া সুনাম রয়েছে। হাতের কাজে তারা পৃথিবীর সেরা। বাংলাদেশ থেকে অনেক কারিগর বিদেশে গিয়ে কাজ করছে। যখন তারা জানতে পারল বাংলাদেশেও একটা গোল্ড রিফাইনারি হবে, সবাই তাকিয়ে আছে কখন এটা শুরু হবে, কখন আমরা বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করব। তিনি বলেন, বাজুসের প্রেসিডেন্টের একটা স্বপ্ন, তিনি একটা স্বর্ণের পার্ক বানাচ্ছেন বসুন্ধরা সিটিতে। এবং একটা রিফাইনারি করা হচ্ছে। আমি আনন্দিত প্রধানমন্ত্রী ৫০ বছর পর একটা রিফাইনারির অনুমতি দিয়েছেন। অনেকেই বলেছিল, বাংলাদেশ রিফাইনারি করতে পারবে তো। আমি দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলব, অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও পারব। যুদ্ধ ও করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আশা করি, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রিফাইনারির কাজ পুরোদমে শুরু হবে। গত কয়েক বছর ধরে বাজুস ফেয়ার হচ্ছে তিন দিন। আইসিসিবিতে আগামীতে বাজুস ফেয়ার হবে সাত দিন। মেলায় অংশ নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিতে হবে না। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করব বাজুসকে আমরা যে ফ্লোরটা দেব, সেখানে উৎপাদন ও রপ্তানির কাজ শুরু করুন। ইচ্ছা করলে এক হাজার কর্মচারী দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। ১২০০ মেম্বার ১০ জন করে হলেও ১২ হাজার লোক সেখানে কাজ করতে পারবে। এ স্বর্ণ রপ্তানি হলে আপনাদের অনেক অনেক সুবিধা হবে।
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, এখন আমাদের ডলারের মূল সোর্স হচ্ছে গার্মেন্টস ও প্রবাসীরা। যখন আমরা স্বর্ণ রপ্তানি করব তখন বাংলাদেশের জিডিপি ২ শতাংশ এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের লাখ লাখ শ্রমিককে কাজে লাগাতে পারব। তিনি বলেন, বাজুস যদি কেরানীগঞ্জের কারখানা করে তাহলে সেখান থেকেই শুরু হতে পারে জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি। রিফাইনারি শুরু হওয়ার আগে আপনারা রপ্তানি শুরু করতে পারবেন। এ স্বর্ণ রিফাইনারি আপনাদের অনেক সম্মান ও সমৃদ্ধি এনে দেবে। আপনাদের সবাইকে ছোট হলেও কারখানা করতে হবে। সেটা ২০০ ফুটের হোক, তবুও একটা কারখানা করেন। সেখানে উৎপাদন করে রপ্তানি করুন। রপ্তানির জন্য সরকার প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দেবে। এ দেশের স্বর্ণশিল্পের যে সুনাম সেটা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, ডেইলি সান সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লোটাস, নিউজ২৪ টিভির নির্বাহী পরিচালক রাহুল রাহা ও বাংলানিউজ সম্পাদক জুয়েল মাজহার।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ‘সোনায় বিনিয়োগ ভবিষ্যতের সঞ্চয়’। গতকাল রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, বাজুসের সাবেক সভাপতি ও উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ডা. দীলিপ কুমার রায়, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাজুসের সহসভাপতি গুলজার আহমেদ এবং বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রহুল আমিন রাসেল।
বাজুসের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখায় সাত জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- বাজুসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৈয়দ সামসুল আলম, কাজী সিরাজুল ইসলাম, সত্য রঞ্জন ব্রহ্ম, জগদীশ চন্দ্র সরকার, আলাউদ্দিন আহমেদ, খবির উদ্দিন ও আবদুল লায়েস। পাশাপাশি বাজুসের বর্তমান কমিটির সব সদস্যকেও সম্মাননা তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। গতকাল দিনব্যাপী দেশের ৪০ হাজার জুয়েলার্স পরিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন। বাজুস জানায়, ১৯৬৬ সালের ১৭ জুলাই বাজুস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৫৭ বছর পূর্ণ করে ৫৮-তে পদার্পণ করছে বাজুস। বাজুসের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকাল ৫টার পর ঢাকা মহানগরীর সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে সংগঠনটি।