বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিন বছরেও সচল হয়নি ২৬ খাল

সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো ♦ মাঝেমধ্যে বর্জ্য পরিষ্কার করেই ক্ষান্ত সিটি করপোরেশন ♦ ১০ মাসেও খাল সংস্কার প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেনি ডিএসসিসি

হাসান ইমন

তিন বছরেও সচল হয়নি ২৬ খাল

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে ২৬টি খাল হস্তান্তর করে ঢাকা ওয়াসা। এরপর শুরু হয় পরিষ্কার অভিযান। কিন্তু গত প্রায় তিন বছর খাল উদ্ধারে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা শুধু ঘোষণাই দিয়ে গেছেন তবে বাস্তবে আলোর দেখা মেলেনি। শুধু তা-ই নয়, খালের সীমানাও নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থা দুটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চারটি খাল সংস্করণে একটি প্রকল্প নিলেও দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাল উদ্ধার করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে।

রাজধানীর ২৬ খাল : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় খাল রয়েছে কাটাসুর, হাজারীবাগ, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, আবদুল্লাপুর, রামচন্দ্রপুর, বাউনিয়া, দ্বিগুণ, দিয়াবাড়ী, ধোলাইখাল, রায়েরবাজার, বাইশটেকি ও শাহজাহানপুর খাল। আর দক্ষিণ এলাকায় খাল রয়েছে জিরানী, মান্ডা, মেরাদিয়া, গজারিয়া, কসাইবাড়ী, শাহজাদপুর, সুতিভোলা, ডুমনি, বোয়ালিয়া, রামপুরা, গোবিন্দপুর, সেগুনবাগিচা ও খিলগাঁও-বাসাবো খাল।

উদ্ধার হয়নি কোনো খাল : দুই সিটির আওতাধীন ২৬ খালের মধ্যে একটিও উদ্ধার করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। তবে ২০২১

সালের শুরুতে মোহাম্মদপুরের বসিলায় লাউতলা খাল উদ্ধার করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। খাল উদ্ধার কার্যক্রম শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি খালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। সে ঘোষণার পর পেরিয়েছে দুই বছর। কিন্তু এখনো একটি খালও অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি। অন্যদিকে উদ্ধার করা লাউতলা খালটি ডিএনসিসির তালিকার বাইরে ছিল। এর আগে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি ইব্রাহিমপুর খালে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সংস্থাটি। ওই সময় বাধার সম্মুখীনও হয়। কয়েক দিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও পুরো খালটি দখলমুক্ত হয়নি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিও খালে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে। একই সঙ্গে সংস্থাটি দুটি বর্তমানে খালে থাকা বর্জ্য পরিষ্কার করছে।

১০ মাসেও চার খালের সংস্কার প্রকল্প শুরু হয়নি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্যামপুর, জিরানী, মান্ডা ও কালুনগর খাল এবং এর সাতটি শাখা অবৈধ দখলমুক্ত করা, খনন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য ৮৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। প্রকল্পটি গত বছর ১১ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি এরই মধ্যে ১০ মাস পার করছে কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তবে গত মাসের ১৫ তারিখে সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগ থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, চলতি বছর ৩০ মে রাজউক, বাপউবো, জেলা প্রশাসক, ঢাকা ওয়াসা, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের প্রতিনিধি নিয়ে মেয়রের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। এই চারটি খাল থেকে দখলদার অপসারণ এবং পরবর্তী সময়ে খালের দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ নান্দনিক ও জনবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে খালের উভয় পাশের জমির মালিকানার তথ্যাদি সরবরাহ করতে বলা হয়। কিন্তু কোনো সংস্থা তথ্য না দেওয়ায় খালের নকশা প্রণয়নের কাজ করতে পারেনি সংস্থাটি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্পের পরিচালক খায়রুল বাকের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের কনসালটেন্ট হিসেবে সম্পত্তি বিভাগ খালের সীমানা নির্ধারণের কার্যক্রম করছে। সীমানার কাজ শেষ হলে নকশা প্রণয়ন করা হবে। এর পরই প্রকল্পের দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হবে।

খালের সীমানা নির্ধারণে জটিলতায় ঢাকা উত্তর : ২০২১ সালের শুরুতে খালের সীমানা নির্ধারণে প্রকল্প নেয় সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড (১২ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ৫৭ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি) এবং অ্যাডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত বছরের শুরু থেকেই সিএস জরিপ অনুযায়ী খাল উদ্ধারে সীমানা নির্ধারণ করে পিলার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সিএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা পিলার স্থাপন করায় অনেকের ব্যক্তিগত জায়গায় খুঁটি পড়ে। করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চল ও নগর ভবনে এমন তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে, যেগুলোর সবই ব্যক্তিগত জায়গায় খুঁটি বসানোর অভিযোগ। রাজধানীর খাল নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাল উদ্ধার করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন জরিপ করা। জরিপের কাজ শেষ করে খালের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর হবে খাল উদ্ধার। কিন্তু সিটি করপোরেশন খাল বুঝে পাওয়ার পর প্রায় তিন বছর হতে চললেও একটি খালেরও সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে ২৬টি খাল রয়েছে। সব একসঙ্গে উদ্ধার করে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া কঠিন কাজ। সে জন্য আগে একটি খাল নির্দিষ্ট করতে হবে। সেই খাল উদ্ধার করে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলে সেটি সহজ হবে। এরপর একটি একটি করে উদ্ধার করে খালগুলোয় উন্নয়ন প্রকল্প নিলে তা টেকসই হবে বলে মনে করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর