বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে অস্থিরতা বিএনপির সমস্যা কোন্দল

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

আওয়ামী লীগে অস্থিরতা বিএনপির সমস্যা কোন্দল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের হাওয়া লেগেছে রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনে। এ আসনে ১৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা। আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন দলের অন্তত ডজনখানেক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ২০০৮ সাল থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের টানা দখলে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে বিএনপির মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্য কোন্দল। দলটির প্রত্যাশা, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন। তবে বিএনপির জয়ের বড় বাধা দলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে    উন্নয়নের কথা বলছেন। তবে শেষ বাক্যে বলছেন, দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তাকে বিজয়ী করার জন্য সবাই কাজ করবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বিনয়ী মনোভাবের কারণে নেতা-কর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কাজী কেরামত আলী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি এখনো বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেননি। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মীদের সঙ্গে সভা করে তিনি বিভেদ দূর করার চেষ্টা করছেন। তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে কর্মিসভা করায় নতুন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, নদীশাসন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী তাঁকে মনোনয়ন দেবেন। তবে গত বছর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবু নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন।

দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. রেজাউল হক রেজা। তিনি ১৯৭১ সালে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সভা-সমাবেশে উন্নয়ন প্রচারে ব্যস্ত তিনি। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তিনি। ১৯৮৫ সালে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে দুটি বড় শিল্পকারখানা স্থাপন করবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার দুবারের সাবেক মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী। বিএনপি নির্বাচনে না এলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের হিসাব আছে। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব।’ প্রকাশ্য কোন্দলে জড়িয়ে পড়া বিএনপির দুই নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম মিয়া। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম রাজবাড়ী পৌরসভার তিনবারের মেয়র ছিলেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য। তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও।

জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন দলের জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান বাচ্চু, জেলা যুগ্মসাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল মাহমুদ। রাজবাড়ীতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনের নিয়ম অনুয়ায়ী কোনো প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন চাইবার সুযোগ নেই। দল যাকে মনোনয়ন দেবে সে-ই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম খান ওরফে জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। দল আমাকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেছিল।’

সর্বশেষ খবর